বিধি-ভঙ্গ: গ্যাস জালিয়ে রান্না করা হচ্ছে সল্টলেকের বি ডি মার্কেটে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
সল্টলেকের এফডি ব্লকে গত বছরের জানুয়ারিতে বিধ্বংসী আগুন লেগেছিল একটি অস্থায়ী বাজারে। ওই বাজারে ভাতের হোটেলে রান্না করা হত। রাতের অন্ধকারে সেখানে আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় গোটা বাজারই।
গত বছরেই কেষ্টপুরে একটি পরোটার দোকানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। তার পরে ভিতরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফাটে। ওই দুর্ঘটনায় পথচলতি বহু মানুষ আহত হন। তিন জনের মৃত্যুও হয়।
এফডি ব্লকের আগুনের পরে বিধাননগর পুরসভা জানিয়েছিল, সল্টলেক-সহ বিধাননগরের বাজারগুলিতে ফায়ার অডিট হবে। বাজারের ভিতরে কোনও ভাবেই আগুন জ্বেলে রান্না করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও ফায়ার অডিট এ পর্যন্ত চালু করা যায়নি সল্টলেকের বাজারগুলিতে।
বিধাননগর পুরসভা অবশ্য জানাচ্ছে, কেষ্টপুরে ওই দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন বাজারগুলিতে যে সব ব্যবসায়ী আগুন জ্বেলে রান্না করেন, তাঁদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা বাজারের ভিতরে হোটেল চালালেও সেখানে আগুন জ্বেলে রান্না করা যাবে না। তার বদলে বাইরে থেকে রান্না করে খাবার বাজারের ভিতরে হোটেলে আনতে হবে। কিন্তু পুরসভার সেই নোটিসকে অধিকাংশ জায়গাতেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। এমনও হয়েছে যে, এক বার নোটিসে কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয় বার নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারের ভিতরে বা বাজারের লাগোয়া জায়গায় আগুন জ্বেলে রান্না বন্ধ করা যায়নি।
পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় বিধাননগরের চিনার পার্কের কাছে শর্ট সার্কিটের কারণে একটি খাবারের দোকানে আগুন লাগে। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আরও তিনটি দোকান পুড়িয়ে দেয়। ওই সব দোকানগুলির দাবি, তাদের অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র এবং দমকলের ছাড়পত্র আছে। কিন্তু যে ভাবে ঘেঁষাঘেঁষি করে দোকানগুলি তৈরি হয়েছিল, তাতে সেগুলি কী ভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ওই সব দোকান তৈরির অনুমতি পুরসভা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, এমন কোনও কিছু করতে দেওয়া হবে না। এ ভাবে যেখানে-সেখানে রান্না করে খাবারের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।’’
যদিও সম্প্রতি সল্টলেকের কয়েকটি বাজারে ঘুরে দেখা গেল, পরিস্থিতির বিশেষ বদল হয়নি। বিডি ব্লকে একটি মিষ্টির দোকানের সামনে সিঙাড়া ভাজা হচ্ছিল। এক দোকানির দাবি, তিনি পুরসভার তরফে কোনও নোটিস পাননি। অদূরে রয়েছে একটি ভাতের হোটেল। তার ভিতরে এক চিলতে রান্নাঘরে দেখা গেল, গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে। হোটেলের মালিক গৌরহরি প্রধান বলেন, ‘‘পুরসভার নোটিস পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে রান্নার কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। ইনডাকশনে অল্প সংখ্যক লোকের রান্না হতে পারে। আর আগুন যে সিলিন্ডার ফেটে সব সময়ে লাগে, তা তো নয়। শর্ট সার্কিট থেকেও তো আগুন লাগে। আমরা পুরসভাকে বলেছি একটু সময় দিতে।’’ তাঁর হোটেলের সামনের দিকেই আবার রয়েছে আসবাব ও বালিশ-তোষকের অস্থায়ী দোকানও। একই অবস্থা সল্টলেকের সিকে বাজারে। আর এফডি ব্লকে যেখানে আগুন লেগেছিল, তার পাশে পুরসভার বাজারে একটি মিষ্টির দোকানেও আগুন জ্বেলে রান্না হয় বলেই অভিযোগ।
সল্টলেকের মোট ১৭টি বাজারে পুরসভা নোটিস পাঠিয়েছে। বাজার বিভাগের মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমার জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, বাজারের ভিতরে সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করা যাবে না। ফায়ার অডিট শুরু হবে। দমকল বিভাগের নির্দেশ মেনে আমরাও পদক্ষেপ করব। আইনের বাইরে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না। নোটিস পাঠানো হচ্ছে, এর পরে বাজারে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্নায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোর্ড বসানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy