পাঁচ জন মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শুনবেন! অভিযোগ, শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের ডাকা শুনানিতে এসে কমিশনের চেয়ারপার্সন-সহ কমিশনের ল’অফিসার, সদস্য, কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে এ নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করলেন এক ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার দুপুরের এই ঘটনার পরে উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কমিশনের সচিব সুপর্ণা দাস আহমেদ। অভিযোগ করা হয়েছে বরাহনগরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুর অধিকার সুরক্ষা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুপর্ণা দাস আহমেদের অভিযোগের ভিত্তিতে অতীশ চন্দ নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কথাবার্তা (৫০৯) এবং সরকারি কাজে বাধা দানের (৩৫৩) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিবও।
কমিশন সূত্রের খবর, সম্প্রতি বছর চোদ্দোর এক কিশোরী লিখিত একটি অভিযোগে জানায়, তার বাবা, কাকা এবং ঠাকুরমা মিলে তার মায়ের উপরে অত্যাচার করেন। মারধরের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ চলে নিয়মিত। এক বার তার মাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগে জানিয়েছে ওই কিশোরী। অভিযোগ, পড়াশোনা সংক্রান্ত নানা কারণে তাকেও মাঝেমধ্যেই মারধর করেন বাবা। এতে সে এতটাই ভয়ে থাকত যে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারেনি। মেয়েটির অভিযোগ, তার ও তার মায়ের উপরে নিয়মিত এই অত্যাচারের ফলে সে সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি।
কিশোরীর কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে কমিশন তার বাবাকে সমন পাঠায়। বৃহস্পতিবার সেই সমনের ভিত্তিতে কমিশনের বেঞ্চে শুনানিতে হাজির হন অতীশবাবু। বেঞ্চে ছিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন, সচিব, এক জন সদস্য, ল’অফিসার এবং কাউন্সেলর। অভিযোগ, কমিশনের যে ঘরে বেঞ্চ বসেছিল, সেখানে ঢোকার পরেই অতীশবাবু চেয়ারপার্সন-সহ বাকিদের দেখেই বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা পারবেন তো পাঁচ মহিলা মিলে বিচার করতে?’’
এখানেই থেমে থাকেননি ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, পরে তাঁর বিরুদ্ধে মেয়ের আনা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে গিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। মন্তব্য করেন, তাঁর মেয়েকে শিখিয়ে এ ধরনের অভিযোগ লেখানো হয়েছে। তিনি স্ত্রীর উপরে কোনও রকম অত্যাচার করেননি। মা অবশ্য অভিভাবক হিসেবে স্ত্রীকে চড় মারতেই পারেন বলে মত তাঁর। এ কথা শুনেই কমিশনের সকলে জানতে চান, তিনি কী করে এ ধরনের কথা বলছেন? অভিযোগ, ফের চিৎকার করতে থাকেন অতীশবাবু। তাঁর বক্তব্য, মারতে পারেন বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা কোনও দিন মারেননি। কমিশন তাঁর না বলা কথা তাঁর মুখে বসানোর চেষ্টা করছে বলে পাল্টা অভিযোগ তোলেন ওই ব্যক্তি। কমিশনে কেন কোনও পুরুষ নেই, কেন শুধু মহিলারা রয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, তাঁর চিৎকারের জেরে এক সময়ে বেঞ্চের শুনানি থামিয়ে দিতে হয়। পরে পুরো বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়।
কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, শিশুদের কাছ থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসে। তার ভিত্তিতে গুরুত্ব বুঝে অভিভাবকদের ডাকাও হয়। |শুনানিতে অভিভাবকের দোষ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়। নির্দিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। এমনকি, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু এর আগে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি কমিশনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy