হাওড়ায় সাংবাদিকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
সালকিয়ার স্কুলছাত্রকে খুনের ঘটনায় পুলিশকে দুষলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তদন্তে পুলিশের অদক্ষতার যে অভিযোগ উঠেছিল, সোমবার হাওড়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে কার্যত সেই অভিযোগেই তাদের বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে ওই বৈঠকের ঘণ্টা দুই পরে পুলিশের বদলির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রথম নামটিই হাওড়ার কমিশনার অজেয় রানাডের। তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) পদে। হাওড়ায় তাঁর জায়গায় আসছেন হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। হাওড়া কমিশনারেট তৈরি হওয়ার সময় থেকে গত চার বছর ধরে কমিশনার পদে ছিলেন রানাডে। অনেকের মতে, সালকিয়া-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষের সঙ্গে রানাডের বদলির যোগ রয়েছে। তবে সরকারি তরফে সেই জল্পনা উড়িয়ে একে রুটিন বদলি বলেই দাবি করা হয়েছে।
সালকিয়ায় স্কুলছাত্রকে অপহরণ করে খুনের এই ঘটনায় পুলিশের কাজে যে তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এ দিন হাওড়া শরৎ সদনে ওই বৈঠকে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন মমতা। কার্যত স্বীকার করে নেন, তদন্তে গাফিলতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় এক জন আত্মীয় জড়িত থাকলেও পুলিশ তাঁকে প্রথম থেকে ধরেনি। আত্মীয় বলে ছেড়ে দিয়েছিল। তাঁকে আগে থেকে ‘ট্র্যাক’ করা গেলে অভিযুক্তকে আগেই ধরা যেত।’’
গত শুক্রবার সালকিয়ার বাসিন্দা, নিখোঁজ স্কুলছাত্র বিশাল শর্মার দেহ উদ্ধারের পরে পরিবার অভিযোগ করে, দু’দিন আগে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন পাওয়ার পরেই পুলিশকে জানানো হয়েছিল। বিশালের এক আত্মীয়ের দেওয়া তথ্যে ভুল পথে চালিত হয়ে ওই বালককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বিভ্রান্ত হওয়ার কথা কার্যত মেনে নেন পুলিশকর্তারাও। এ নিয়ে পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকে শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সালকিয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে তিনি জেনেছেন, ওই স্কুলছাত্রের এক আত্মীয়কে প্রথমে পুলিশ ধরেছিল। কিন্তু অন্য আত্মীয়দের কথায় তাকে ছেড়ে দেয়। মমতা বলেন, ‘‘কখনও কখনও আত্মীয়েরাও খুন করে। তাই পুলিশকে বলেছি, তাঁদের কাজ তাঁদের মতো করতে। এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমি পুলিশকে সর্তক করে দিয়েছি।’’
গত জুন মাসের পরে এক বছর বাদে এ দিন হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর ১টার ওই বৈঠকে যোগ দিতে সাড়ে ১২টা নাগাদ একাই শরৎ সদনে পৌঁছন তিনি। তখনও মঞ্চে এসে পৌঁছননি জেলার মন্ত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী আসার বেশ কিছুক্ষণ পর একে একে আসেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায় (শহর), সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, হায়দায় আজিজ সফি। মুখ্যমন্ত্রীর আগেই অবশ্য পৌঁছে যান রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস, হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে, মেয়র রথীন চক্রবর্তী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পদস্থ কর্তা-সহ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সদস্যেরা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জেলার মন্ত্রীদের জন্য অপেক্ষা করেননি। তার আগেই প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করে দেন।
এ দিন জেলায় ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু না হওয়া নিয়ে জেলা সভাধিপতি করবী ধুলের বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে জেলায় ১০০ দিনের কাজ, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী নিজভূমে নিজ গৃহ-সহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ দিন মমতা জানান, হাওড়া শহরে যেহেতু অনেক ফুটবলার রয়েছেন, তাই শহরে প্রবেশের মুখে একটি তোরণ হবে। যার মাথায় থাকবে দু’টি ফুটবল। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, শীঘ্রই কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে বাস টার্মিনাসটির উদ্বোধন করা হবে। তবে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজটের কথা ভেবে ওই টার্মিনাসে আপাতত লোকাল বাস সার্ভিস চালু হবে। বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড থেকে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত একটি উড়ালপুলেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে তবেই ওই টার্মিনাস থেকে দূরপাল্লার বাস চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy