Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
কাগজ, যন্ত্র সবই তো রেখে এসেছি, বলছেন প্রাক্তন

‘এ ভাবে ব্রিজ পড়লে  তৃণমূল তো ছিঁড়ে খেত’

পরপর সেতুভঙ্গের ধাক্কা খেয়ে রাজ্য সরকার কখনও আঙুল তুলছে রেল বা বন্দরের মতো কেন্দ্রীয় দফতর, কখনও পুরনো আমলের দিকে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সেতু সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যে ভাবে সেতু ভেঙে পড়েছে,পণ্য পরিবহণ কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বন্দর কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

যে ভাবে সেতু ভেঙে পড়েছে,পণ্য পরিবহণ কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বন্দর কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

পরপর সেতুভঙ্গের ধাক্কা খেয়ে রাজ্য সরকার কখনও আঙুল তুলছে রেল বা বন্দরের মতো কেন্দ্রীয় দফতর, কখনও পুরনো আমলের দিকে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সেতু সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন কথায় বিস্মিত বিগত জমানার পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী! তিনি বলছেন, ‘‘সরকার থেকে বিদায়ের সময়ে পুরনো কাগজ বা যন্ত্রপাতি— কোনও কিছুই তো আমরা বাড়ি নিয়ে চলে আসিনি! রাজনৈতিক ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এই সরকার পড়েনি। তা হলে তাদের কাজ করতে বাধা দিল কে!’’

বাম জমানায় দীর্ঘ কাল পূর্ত দফতর ছিল বাম শরিক আরএসপি-র কাছে। যতীন চক্রবর্তী, মতীশ রায়, অমর চৌধুরী থেকে ক্ষিতিবাবুদের হাতেই ছিল রাজ্যের সিংহভাগ সড়ক-সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য বা কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীর মতো প্রাক্তন মন্ত্রীদের মতে, কিছু দফতরে প্রযুক্তিগত কাজ বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সেখানে চলতে হয়। বারবার মন্ত্রী বদলালে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হয়। তাঁরাই বলছেন, বামফ্রন্টের শরিকি সংসারে পুরনো নেতার পরাজয় বা মৃত্যু না হলে দীর্ঘ দিন দফতরের হাত বদল হয়নি। সেখানে তৃণমূলের একক সরকারে সাত বছরে এর মধ্যেই চার জন পূর্তমন্ত্রী হয়েছেন— সুব্রত বক্সী, সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার, শঙ্কর চক্রবর্তী এবং অরূপ বিশ্বাস।

প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী এবং অধুনা আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতিবাবু জানাচ্ছেন, তাঁর আমলে বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদদের নিয়েই সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হত। তাঁর দাবি, সেই কাজে বিরাট গাফিলতি হয়নি বলেই এমন বড় বিপর্যয় সে আমলে এড়ানো গিয়েছিল। কল্যাণীর ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে এক বার বড়সড় ত্রুটি ধরেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারেরাই। দ্রুত সেতু সংস্কারও হয়েছিল। প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে নদী-নালার উপরে অনেক সেতু আছে। শুধু চোখে দেখে তো পরীক্ষা সম্ভব নয়। তাই ভেসেলে নিয়ে গিয়ে এবং জলে কাজ করার জন্য যন্ত্রপাতি কিনছিলাম আমরা।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘অনেক বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই কাজ হয়েছে। এখনকার মতো ঘটনা ঘটলে তৃণমূল তো আমাদের ছিঁড়ে খেত!’’

সেতু পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য আনা যন্ত্রপাতি রাখতে বাগুইআটিতে গোডাউন করেছিল পূর্ত দফতর। অর্থমন্ত্রীর কাছে দরবার করে টাকা বরাদ্দ করানো হত যন্ত্রের মতো। আর কাগজপত্র? প্রাক্তন মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের আগেও তো সরকার ছিল। তারা বা আমরা সকলেই নথিপত্রের ফাইল মহাকরণে রেখেছি। আমাদের সময়ে অন্তত কোনও সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে কাগজ খুঁজে না পাওয়ার ঘটনা মনে নেই। পুরনো নথি এবং সেতু বা পুরনো কাঠামোর কাজ হলে তার কাগজ রাখার জন্য আর্কাইভ পর্যন্ত করেছিলাম।’’ ঢাকুরিয়ার প্রাক্তন বিধায়কের সংশয়, ‘‘মহাকরণ তো আর নেই। সব তুলে নবান্নে নিয়ে যেতে গিয়ে কোথায় কী হয়েছে, কে বলতে পারে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE