বন্ধু: দুর্ঘটনাস্থলের কাছে সেই সাহায্যকারীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার সারা রাত জেগেছেন। বুধবারও কেউ নিজের কাজে যাননি। ঘুরে বেড়িয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে। বারবার উদ্ধারকারীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ওঁদের কোনও কাজে লাগবে কি না। ওঁরা কেউ মেট্রোর ঠিকা কর্মী, কেউ আবার এলাকার কোনও কারখানার শ্রমিক। কেউ বা স্থানীয় বাসিন্দা, চা বিক্রেতা।
মাঝেরহাট সেতুর দুর্ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এখনও সেতুর নীচে এক জন আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা। ঘটনার সময়ে সেতুর কাছাকাছিই ছিলেন মেট্রোকর্মী রাধে কুমার। বুধবার সেতু-বিপর্যয়ের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তাঁর। তিনি এবং তাঁর সঙ্গে আরও পাঁচ জন, সকলের আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভেঙে পড়া সেতুর সামনে। উদ্ধারকারী দল তো দূরের কথা, পুলিশও তখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়নি। রাধে জানান, তিনি মেট্রোর ক্রেন অপারেটর।
ঘটনার সময়ে ভেঙে পড়া সেতুর কাছেই বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মুহূর্তে মনে হল, বড় ভূমিকম্প হচ্ছে। সঙ্গে জোর আওয়াজ। এলাকাটা ধুলোয় ঢেকে গেল। গিয়ে দেখি, যেন মৃত্যুপুরী।’’ তাঁরা নিজেরাই এর পরে ক্রেন চালিয়ে উদ্ধারকাজে নামেন বলে দাবি রাধের। আটকে পড়া বাসটি ছাড়া সব গাড়িই তাঁদের ক্রেনের সাহায্যে তোলা হয়েছে বলে দাবি মেট্রোর ঠিকা কর্মীদের।
আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার
রাজেন্দ্রলাল বড়াই নামে আর এক জন ওই এলাকায় চায়ের দোকান চালান। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি সিডান গাড়ি থেকে এক তরুণী ও এক মহিলাকে উদ্ধার করেন তিনি। তাঁরা যে বেঁচে আছেন, সে কথা জানতে পেরে এ দিন খুব খুশি রাজেন্দ্রলাল। বলেন, ‘‘ওঁরা বাঁচান বাঁচান বলে আকুতি করছিলেন। এক মহিলা বাসযাত্রী তো আবার এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে, বাস সমেত নীচে পড়েও চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন।’’
আরও খবর: মধ্যরাতে মানুষের গন্ধ খুঁজছে স্নিফার ডগ
জাকির হুসেন নামে আর এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে ঘটনাস্থলে জল সরবরাহ করতে। ছোট চেহারার জাকির বলেন, ‘‘আমরা কাকে ফেলে কাকে সরাব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই সামনে কল থেকে জল ভরে এনে তাঁদের চোখ-মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছিলাম। কাউকে কাউকে জল খাইয়েও দিলাম।’’ বুধবারও ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গলা বুজে আসছিল কুন্দনকুমার প্রসাদ নামে আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর। কুন্দন বলেন, ‘‘সেতুর নীচে অনেককে থাকতে দেখে বহু বার মনে হত, কিছু বিপদ হবে না তো! কাল দেখলাম, সেই ভয়ই সত্যি হয়ে গেল!’’
আরও খবর: উদ্ধারকাজে নজির অ্যাম্বুল্যান্স চালকের
কুন্দনের মতো একই অবস্থা রবীন্দ্র কুমার ও রোহিত কুমারের। এই বিপর্যয়ের কি কোনও ব্যাখ্যা হয়, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এ দিন নিজেরাই আলোচনা করছিলেন। দেখা গেল, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও সরানো যায়নি ভেঙে পড়া সেতুর অংশ। কাটা যায়নি আটকে থাকা গার্ডারও। এখনও খোঁজ নেই মেট্রোর এক ঠিকা কর্মীর। এই সব ঘটনা পরম্পরা অস্বস্তি বাড়িয়েছে রাধে, রোহিত, রাজেন্দ্রদের। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘কাল সামনে থেকে উদ্ধার করেছি। আজ ওই এলাকায় ঢুকতেই দেয়নি। ঢুকতে দিলে হয়তো কিছু সাহায্য করতে পারতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy