Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রেলকে খোঁচা মমতার, পাল্টা যুক্তি রেলেরও

অভিযোগের ইঙ্গিত একটাই। মাঝেরহাটে ভেঙে পড়ার সেতুর পাশে মেট্রো রেলের কাজ চলায় ভূমিকম্পের মতো মাটি কাঁপে। তাতে সেতুর পিলার নড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা রাইটস অবশ্য দুর্ঘটনার পিছনে এ ধরনের কোনও কারণ মানতে চায়নি।

ঘটনাস্থলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ঘটনাস্থলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

সকালে নগরোন্নয়নমন্ত্রী। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।

অভিযোগের ইঙ্গিত একটাই। মাঝেরহাটে ভেঙে পড়ার সেতুর পাশে মেট্রো রেলের কাজ চলায় ভূমিকম্পের মতো মাটি কাঁপে। তাতে সেতুর পিলার নড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা রাইটস অবশ্য দুর্ঘটনার পিছনে এ ধরনের কোনও কারণ মানতে চায়নি।

তবে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পরে স্বাভাবিক ভাবে মাঝেরহাটের সেতুভঙ্গ এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। অনেকের মতে যা কার্যত রাজ্য-রেল বিরোধের আভাস। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলে রেখেছেন, ‘‘এখনই কোনও নির্দিষ্ট কারণ বলব না। আমি কোন দিককেই ছোট করে দেখতে চাই না। আবার কোনও কিছুকেই একদিনে সার্টিফিকেটও দিতে চাই না। যা হয়েছে তার সব দিকের তদন্ত হবে।’’ আর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় জাহাজ ও সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতীন গডকড়ী বলেছেন, তাঁরা কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চান না। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে রেল বা জাতীয় সড়ক-সংস্থার সেতু বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠাবেন। আজ, বৃহস্পতিবার নবান্নে সেতুভঙ্গ নিয়ে জরুরি বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনাস্থলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখুন ভিডিয়ো

দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরেই দুর্ঘটনাস্থলে যান মমতা। তাঁর সঙ্গেই শহরে ফেরেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন নগরোন্নয়মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তাঁদের পাশে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ন’বছর ধরে এখানে মেট্রোর কাজ চলছে। এর জন্য কখনও এখানে জল জমে, যানজট হয়। পাইলিংয়ের সময় ভাইব্রেশন বেশি হত। অনেকেরই মনে হত যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আগে মেট্রোর কাজের জন্য মধ্য ও উত্তর কলকাতাতেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। এটা প্র্যাকটিক্যাল সমস্যা।’’ ফিরহাদও সকালে বলেছিলেন, ‘‘নেপালে ভূমিকম্প হলে, কলকাতাতেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেতুর একেবারে কাছ দিয়ে মেট্রো রেলের কাজ চলছে। তার জন্য ওখানে মাটি কাঁপছে। হতেই পারে তার প্রভাব পড়েছে।’’

রাজ্য যেতে না বললেও এ দিন সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাইটস-এর প্রতিনিধিরা। সেখানে তাঁদের এক সদস্য বলেন, ‘‘মেট্রো রেলের কাজের জন্য এলাকায় কম্পন হয়েছে, আর তাতেই সেতু ভেঙে পড়েছে, এটা হতে পারে না।’’ পরে নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘রাইটস ওই কথা বলার কে? তদন্ত না করেই এমন কথা দুম করে কি বলা যায়?’’

আরও পড়ুন: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার

আরও পড়ুন: অনেক দিনের ‘ক্লান্তি’ অসহ্য হতেই মাঝেরহাটে এই বিপর্যয়!

রাইটস সূত্রে আরও দাবি, বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়ার পরে তাদের শহরের বিভিন্ন উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। তখনই তারা মৌখিক ভাবে রাজ্যকে জানিয়েছিল, মাঝেরহাট সেতুর হাল খারাপ। এ দিনও তাদের পর্যবেক্ষণ, এই সেতুর নকশায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দিকে নজর দেওয়া হয়নি। কারণ, সেতু তৈরির সময় ওই এলাকায় যানবাহনের সংখ্যা বেশ কম ছিল।

এখন ওই সেতু দিয়ে মালবোঝাই ট্রাক-লরির যাতায়াত যে ভাবে বেড়েছে, তা রুখতে মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘এখানে অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’

মাঝেরহাটের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে পূর্ত দফতরের দিকেও। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সেতুতে ছ’মাস অন্তর নজরদারি করি। অনেক সেতুই আগে তৈরি হয়েছে। তার বহু কাগজপত্র আমরা খুঁজে পাই না। পোস্তার উড়ালপুল ভাঙার পরেও অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কাগজপত্র জোগাড় করতে হয়েছিল। মাঝেরহাট সেতুর বয়স ৫৪ বছর বলে ইঞ্জিনিয়ারেরা আমাকে জানিয়েছেন।’’ এর পরেই তিনি জানান, এ বার থেকে প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞদের দিয়ে সব সেতুর কাঠামো নিয়মিত খতিয়ে দেখা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE