Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Majehat Bridge

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার আরও দেহ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২

ধ্বংসস্তূপ সরাতে এনডিআরএফ-এর হাতিয়ার এখন ইলেক্ট্রিক ডিল মেশিন। সেই যন্ত্র দিয়ে ব্রিজের চাঙড়ের উপর বড় বড় গর্ত করে নীচে উঁকি দিয়ে দেখছেন তাঁরা। খোঁজার চেষ্টা করছেন, নীচে কেউ আটকে আছেন কি না।

কাজ করে চলেছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

কাজ করে চলেছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

সিজার মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৪৭
Share: Save:

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হল আরও একজনের দেহ। বুধবার সাড়ে সাতটা নাগাদ ব্রিজের ভাঙা অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে কংক্রিটের চাঙড় সরিয়ে হদিশ পাওয়া যায় একজনের। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এবং কলকাতা পুলিশের উদ্ধারকারীরা এই দেহ উদ্ধার করেন। প্রাথমিকভাবে, দেহটি নির্মীয়মান মেট্রো প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিক প্রনব দে-র বলে চিহ্নিত করেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। তার দেহ সোজা নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হল এই সেতু দুর্ঘটনায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আরও একজনের এই ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

সেতু ভেঙে পড়ার পরই মেট্রো প্রকল্পের নির্মান শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন তাঁদের দু’জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রিজের ভাঙা অংশের তলাতেই চাপা পড়েছিল শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ঝুপড়ি। প্রনব এবং আরও একজন শ্রমিক সেই সময়ে সেই খানেই ছিলেন। মেট্রো কর্মীদের আশঙ্কা ছিল ওরা দুু’জনই আটকে পড়েছেন সেতুর ভাঙা অংশের তলায়। রাতেই এনডিআরএফের কর্মীরা তাঁদের প্রশিক্ষিত কুকুরদের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করেন।

রাত থেকেই তাঁরা ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিনের সাহায্যে তাঁরা ছোট ছোট গর্ত করে ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। বুধবার দিনভর সেই উদ্ধার কার্য প্রথম দিকে খুব ধীর গতিতে চলে। কারণ ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য় বড় ক্রেন বা জেসিবি মেশিন ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। উদ্ধারকারীরা ভেঙে যাওয়া ব্রিজের মধ্যে কার্যত একটি সুরঙ্গ তৈরি করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পৌঁছনর চেষ্টা করেন।

দুপুর থেকে মেট্রো প্রকল্পের দিক থেকে একটি জেসিবি ব্যবহার করে ভাঙা ব্রিজের একটা অংশের কংক্রিট সরায়। তারপরই ধীরে ধীরে সেই সুরঙ্গ পথ আরেকটু বড় করে সেই পথে এই দেহটির হদিশ পান তাঁরা। উদ্ধারকারীদের আশা আরও কেউ তলায় থাকলে আজ রাতের মধ্যেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এদিন দিনভর ধ্বংসস্তূপ সরাতে এনডিআরএফ-এর হাতিয়ার এখন ইলেক্ট্রিক ড্রিল মেশিন। সেই যন্ত্র দিয়ে ব্রিজের চাঙড়ের উপর বড় বড় গর্ত করে নীচে উঁকি দিয়ে দেখছেন তাঁরা। খোঁজার চেষ্টা করছেন, নীচে কেউ আটকে আছেন কি না। এছাড়া ভেঙে পড়া ব্রিজের চাঙড়গুলি ছোট ছোট করে ভেঙে কিছুটা সরিয়ে ফাঁকা করেও দেখা হয়।

রাত-দিন কাজের ফাঁকেই সামান্য জিরিয়ে নেওয়া। বিশ্রাম নিচ্ছে প্রশিক্ষিত কুকুররাও। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: সকাল হল বটে, কিন্তু দুঃস্বপ্নের রাতের স্পর্শ এখনও দগদগে মাঝেরহাটে

কিন্তু এনডিআরএফ কর্মীদের আক্ষেপ, জেসিবি মেশিন ধ্বংসস্তূপের আরও কাছে নিয়ে যেতে পারলে আরও তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা যেত। সে উপায় নেই, কারণ ভাঙা ব্রিজের পশ্চিম দিকে মেট্রোর কাজ চলছে। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই বড় মেশিন দিয়ে কাজ করার। আর পূর্ব দিক বরাবর গিয়েছে খাল। আবার ব্রিজের উপর দিয়ে জেসিবি নিয়ে গিয়েও সেখানে নামানো সম্ভব নয়। কিন্তু এই যন্ত্র নিয়ে যেতে পারলে বিশাল বিশাল চাঙড় হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। চোখে দেখে উত্তর মিলত, নীচে কেউ আটকে আছেন কি না।

আরও পড়ুন: হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি, খাদে পড়ল গাড়িটা

অন্যদিকে, বুধবার সকালেই ভাঙা অংশ-সহ প্রায় গোটা ব্রিজটিই খতিয়ে দেখেছেন রাইটসের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় এই সংস্থা পরিকাঠামো, সড়ক পরিবহণ-সহ নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। পরিকাঠামো বা রক্ষণাবেক্ষণে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করেন এই সংস্থার আধিকারিকরা। তবে সংবাদ মাধ্যমে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE