Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সেতু কেড়েছে সব কিছু, বেঁচে থাকাটুকুই সম্বল

বুধবার শ্রমিকেরা জানান, ওই সেতুর নীচে চারটি ঝুপড়িতে তাঁরা জনা পঞ্চাশেক মিলে থাকতেন। শ্রমিকদের বেশির ভাগই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। তাঁদের জামাকাপড়, রোজগারের টাকাপয়সা, মোবাইল সর্বস্ব রাখা ছিল ওই ঝুপড়িতেই। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে চারটি ঝুপড়িই।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৬
Share: Save:

ইচ্ছে ছিল রোজগারের টাকায় পরিবারের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে পুজোর আগে বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু মঙ্গলবার ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতুর তলায় চাপা পড়ে গিয়েছে ওঁদের সর্বস্ব। আপাতত ইচ্ছেপূরণ তো দূর, কী ভাবে পেট চালাবেন সে ভাবনাতেই দিশাহারা জোকায় নির্মীয়মাণ মেট্রোর শ্রমিকেরা।

বুধবার শ্রমিকেরা জানান, ওই সেতুর নীচে চারটি ঝুপড়িতে তাঁরা জনা পঞ্চাশেক মিলে থাকতেন। শ্রমিকদের বেশির ভাগই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। তাঁদের জামাকাপড়, রোজগারের টাকাপয়সা, মোবাইল সর্বস্ব রাখা ছিল ওই ঝুপড়িতেই। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে চারটি ঝুপড়িই। বুধবার ঘটনাস্থলের কাছেই উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে রাহুল মণ্ডল, রফিকুল মোল্লা, অনিমেষ মণ্ডল, রণজিৎ মণ্ডলেরা জানালেন, তাঁদের সঙ্গী গৌতম মণ্ডল এখনও নিখোঁজ। মিঠু শেখ নামে এক তরুণ জানান, দুর্ঘটনার একটু আগেই ঝুপড়িতে বসে সঙ্গীদের জন্য রান্নার যোগাড় করছিলেন গৌতম। তখনই মিঠুকে তিনি ডিম কিনতে পাঠান। দোকান থেকে ফিরে মিঠু দেখেন, সেতু ধসে গিয়ে তত ক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।

পথিক মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কাজ করছিলাম। হঠাৎ শুনি বিকট আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি গোটা সেতুটাই ভেঙে পড়ছে। প্রথমে হকচকিয়ে যাই। তার পরেই মনে পড়ে গৌতম আর প্রণব তো ঘরে রয়েছে। ছুটে যাই কিন্তু ওদের কাছে পৌঁছতে পারিনি। আশপাশে থাকা আমাদেরই কয়েক জন সঙ্গী চাপা পড়েছিল। দুই সঙ্গীকে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে বার করে আনি।’’ সূত্রের খবর, সেই শ্রমিকেরা আপাতত এসএসকেএম-এ ভর্তি।

রণজিৎ মণ্ডল নামে এক শ্রমিকের আক্ষেপ, ‘‘অনেক খেটে ১৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। ঘরে দুটো ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওদের কথা দিয়েছিলাম নতুন জামা নিয়েই ফিরব। ওদের সামনে কী করে গিয়ে দাঁড়াব?’’

আরও পড়ুন: হাঁটতে গিয়েও গর্তে পড়তে পারি, মন্ত্রী বিঁধলেন বিরোধীদের

রাহুল মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস ধরে কাজ করে জমানো রোজগারের টাকার সব টুকুই সেতুর তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। আপাতত ইনচার্জ কোনও মতে খাওয়ার ব্যবস্থাটুকু করে দিচ্ছেন। কিন্তু একটা জামা পর্যন্ত বার করে আনতে পারিনি। কাল থেকে কাজের পোশাক পরেই রয়েছি।’’

রফিকুল মোল্লা বলেন, ‘‘কাজের সময় আমরা সকলেই মোবাইল ঝুপড়িতেই রেখে আসতাম। ফলে দুর্ঘটনার পরে কারও মোবাইলই আর পাওয়া যায়নি। বাড়িতেও সে ভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। অনেক কষ্টে এক জনের মোবাইল থেকে গ্রামে খবর দেওয়া হয়েছে যে আমরা বেঁচে আছি। বাড়ির লোকেরাও খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’’

এর মধ্যেই অনিমেষ বললেন, ‘‘চোখের সামনে একটা অত বড় সেতু দু’টুকরো হয়ে গেল। যদি রাতে এমনটা হত। তা হলে তো ওই ঝুপড়িগুলোর সঙ্গে আমরা সকলেই পিষে যেতাম। ভাগ্যিস বিকেলে দুর্ঘটনা ঘটেছিল।’’ —সব হারিয়েও এটুকু স্বস্তি সম্বল করেই আপাতত বাড়ি ফিরে যেতে চান ওঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE