Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Park Street Cemetery

পর্যটক টানতে পার্ক স্ট্রিট সমাধিতে আলো ও ধ্বনি শোয়ের প্রস্তাব

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্র চালু হয়েছিল ১৭৬৭ সালে। সেখানে রয়েছে ১৬০০-র মতো সমাধি। সেখানে সমাধি দেওয়া অবশ্য বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দু’শতক আগেই।

An image of Park Street Cemetery

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্র। —ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৬
Share: Save:

সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের কাছে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস আরও বেশি করে তুলে ধরতে এ বার সেখানে আলো ও ধ্বনি শো-এর ব্যবস্থা করতে চায় ক্রিশ্চান বেরিয়াল বোর্ড। শুধু সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্রই নয়, তার কাছেই মল্লিকবাজার সমাধিক্ষেত্র এবং মল্লিকবাজার সমাধিক্ষেত্রের গ্যাস চুল্লির ইতিহাস জানাতে সেখানে তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করতে চায় তারা। ক্রিশ্চান বেরিয়াল বোর্ডের সদস্য রণজয় বসু বলেন, ‘‘এক দিকে যেমন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই জায়গাগুলি, তেমনই সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করাও অনেক সহজ হবে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কোনও বেসরকারি সংস্থা এই কাজে এগিয়ে এলে কাজ দ্রুত হয়ে যাবে বলেই আমাদের মনে হয়।’’

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্র চালু হয়েছিল ১৭৬৭ সালে। সেখানে রয়েছে ১৬০০-র মতো সমাধি। সেখানে সমাধি দেওয়া অবশ্য বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দু’শতক আগেই। কলকাতার অন্যতম বৃহৎ এই সমাধিক্ষেত্রে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জোনস, হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়ো-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষের সমাধি রয়েছে। রণজয় বলেন, ‘‘এই সমাধিক্ষেত্রের এক একটি সমাধির নানা ইতিহাস রয়েছে। সমাধিক্ষেত্র নিয়ে রয়েছে নানা গল্পগাথা। এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাসকে গল্পের মাধ্যমে বলতে পারলে এবং তা আলো ও শব্দের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারলে তা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আর্কষণীয় হয়ে উঠবে। আজকের প্রজন্ম জানতে পারবে এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস।’’ তাছাড়া ক্রিশ্চান বেরিয়াল বোর্ডের সদস্যদের মতে, যত দিন যাচ্ছে এই সমাধিক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণ করা ততই আরও বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় গাছের শিকড় মাটির ভিতর থেকে সমাধির কংক্রিট ফাটিয়ে দিচ্ছে। ঝড় হলে গাছ পড়ে যাচ্ছে। আলো ও ধ্বনি শো চালু হলে তার আয় থেকে সমাধিক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণও করা সম্ভব হবে।

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সমাধিক্ষেত্রের খুব কাছেই রয়েছে মল্লিকবাজার সমাধিক্ষেত্র। সেখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন-সহ অনেক উল্লেখযোগ্য মানুষের সমাধি। ওই মল্লিকবাজার সমাধিক্ষেত্রের পিছনেই রয়েছে শব দাহ করার জন্য গ্যাস চুল্লি। তবে তার ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েক দশক আগেই। কলকাতা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতার মল্লিকবাজারের ক্রিশ্চান কবরস্থানের পিছনে গ্যাস চুল্লি বসানোর তোড়জোড় শুরু
হয়েছিল। গ্যাসের মাধ্যমে শব দাহ করার ব্যবস্থা শুরু হয়। সেখানে জগদীশচন্দ্র বসু, সুখলতা রাও, নেলি সেনগুপ্তের শেষকৃত্য হয়েছিল। জগদীশচন্দ্র বসুর শেষকৃত্যের সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন সেখানে। গ্যাসের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই চুল্লি থমকে যায় বিংশ শতকের সত্তরের দশকের শেষে। সেই গ্যাস চুল্লি ও সংলগ্ন এলাকা এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল।

মল্লিকবাজার সমাধিক্ষেত্রের সঙ্গেও জড়িত নানা ইতিহাস। এখানে অবশ্য এখনও সমাধি দেওয়া যায়। ক্রিশ্চান বেরিয়াল বোর্ডের
সদস্যদের মতে, এই দু’টি সমাধিক্ষেত্র নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করে তা দেখানোর ব্যবস্থা করলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে। চিকিৎসক তথা কলকাতা গবেষক শঙ্কর নাথ বলেন, ‘‘খুব কাছাকাছিই রয়েছে এই দুই সমাধিক্ষেত্র এবং গ্যাস চুল্লি। আলো ও ধ্বনি শো এবং তথ্যচিত্রের ব্যবস্থা করলে পর্যটকরা খুব সহজেই এই জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে পারবেন। কলকাতায় এখনও
অনেক বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসেন। তাঁদের জন্য এই সমাধিক্ষেত্রগুলি আলাদা আকর্ষণের জায়গা হতে পারে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE