Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ট্যাক্সিতে এ বার থাকবে গোপাল ভাঁড়

বছর পাঁচেক আগে নিজের ভাড়ার ট্যাক্সিটি গাছ দিয়ে সাজিয়ে খবরে এসেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে ট্যাক্সির ভিতর থেকে শুরু করে ছাদেও ছড়িয়েছে সেই গাছপালার বাহার।

অভিনব: ট্যাক্সির সাজ। (ইনসেটে) বাংলা বই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অভিনব: ট্যাক্সির সাজ। (ইনসেটে) বাংলা বই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

দূষণ রোধে এই প্রকল্প, শহরের ক্রমবিলীয়মান সবুজ বাঁচাতে কোটি টাকার গাছ বিতরণ, বইয়ের বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকা মেলা বাঁচাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা, বাংলা বই থেকে মুখ ঘোরাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম, তা নিয়ে শহরের পাঁচতারায় আলোচনা —প্রতিদিন এমনই অনেক কিছু কানে আসে। পরিস্থিতি বদলাতে শুধু নিজেদের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথাটাই মাথায় আসে না নাগরিকদের।

কিন্তু এ সবের মাঝেই তিনি এক ব্যতিক্রম। চুপচাপ নিজেই চেষ্টা চালিয়ে যান অন্য এক সবুজের, আশার ছবি তুলে ধরতে। সেই সদিচ্ছা আর সৎ প্রয়াসের জোরেই মহানগরের আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা ‘বাপি গ্রিন ট্যাক্সি’। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নামেই পরিচিত তিনি। যাঁর আসল নাম ধনঞ্জয় চক্রবর্তী।

বছর পাঁচেক আগে নিজের ভাড়ার ট্যাক্সিটি গাছ দিয়ে সাজিয়ে খবরে এসেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে ট্যাক্সির ভিতর থেকে শুরু করে ছাদেও ছড়িয়েছে সেই গাছপালার বাহার। এ বার আরও একটি নতুন উদ্যোগে সামিল হয়েছেন ধনঞ্জয়। যাত্রীদের জন্য নিজের গাড়িতেই বই রাখবেন তিনি। বাংলা বই।

হঠাৎ কেন এমন ইচ্ছে? ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘এক দিন একটা বাচ্চার সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে বুঝেছিলাম, সে গোপাল ভাঁড়ের গল্প পড়া তো দূরস্থান, তাঁর নামও শোনেনি। তখনই ঠিক করি— গোপাল ভাঁড়, বাঁটুল দি গ্রেটের মতো হারিয়ে যেতে বসা চরিত্রদের গল্পের বই রাখব ট্যাক্সিতে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বইগুলো বাংলা। আমার ট্যাক্সির সওয়ারি যিনি হবেন, তিনি যাত্রাপথটুকু সেই বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে যেতে পারবেন। ছোটরা হলে তো কথাই নেই। আজকাল দেখি, বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও চোখ সব সময় স্মার্টফোনের স্ক্রিনে আটকে থাকে। আমার ট্যাক্সিতে রাখা এই সব হাসি-মজার বই কিছু ক্ষণের জন্য হলেও ছোটদের মনোযোগ মোবাইল থেকে বইয়ের পাতায় টেনে রাখবে।’’

এর পাশাপাশি আরও একটা ব্যবস্থাও রেখেছেন বাপি। তাঁর ট্যাক্সিতে থাকবে বই কেনারও সুযোগ। ন্যূনতম থেকে বেশি, যত দূরত্বেই আপনি যান, ‘বাপি গ্রিন ট্যাক্সি’ সকলের জন্যই বইয়ে ছাপানো দাম থেকে পঞ্চাশ টাকা ছাড়ে বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির থাকবেন।

ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। ভাড়ায় খাটানো ব্যক্তিগত গাড়িটি মনের মতো করে সাজিয়ে তুলছেন তিনি। গাড়ির বাইরে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজের ছবির পাশাপাশি রয়েছে ছন্দের মাধ্যমে সচেতনতার নানা বার্তা। ধনঞ্জয় জানালেন, তাঁর এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে সবটাই বিনা পারিশ্রমিকে করে দিয়েছেন পরিচিত কয়েক জন শিল্পী বন্ধু। ভিতরের সিট, দরজা থেকে গাড়ির ছাদ— সবেতেই সবুজের স্পর্শ। গাছ তো আছেই| এরই মধ্যে গাড়ির ড্যাশবোর্ড কেটে বই রাখার তাক তৈরির কাজ শুরু হতে চলেছে। পরিচিত যাত্রী ও বন্ধুরা খবরটা জেনে নিজেরাই দিয়েছেন বেশ কিছু বই। ভাড়ার ট্যাক্সি ছেড়ে নিজে একটি গাড়ি কিনেছেন বাপি। কাজ চলছে সেটিরও। ভাড়ার গাড়ি এবং ট্যাক্সি—দুটোতেই থাকবে নতুন এই সুযোগ।

বিভিন্ন সময়ে ধনঞ্জয়ের গাড়িতে সওয়ারি হয়েছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের শিক্ষক দেবদত্ত গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমার দেখা ট্যাক্সিওয়ালাদের মধ্যে দলছুট ইনি। সব সময়ই নতুন কিছু ভেবে চলেছেন। ওঁর গাড়িতে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে উঠলেই মনের স্বস্তি বোধ হয়। চোখ আরাম পায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Passengers taxi bengali books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE