Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata News

ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট দেখে বিয়ের সম্বন্ধ, টাকা গয়না খুইয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরল ছেলের পরিবার

ছেলের বাবা, প্রসাদ খান বলেন, “ মেয়ে পক্ষ আমাদের বলেছিল তাঁদের গুরুদেব যদি সব দেখে সবুজ সঙ্কেত দেন তাহলে তাঁদের বিয়েতে আপত্তি নেই।”

উত্তরপ্রদেশে কনের বাড়িতে পাত্র-পাত্রী। —নিজস্ব চিত্র

উত্তরপ্রদেশে কনের বাড়িতে পাত্র-পাত্রী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ১৯:৪৭
Share: Save:

ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের মাধ্যমে ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খোয়ালেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী। শুধু টাকা খোয়ানোই নয়, কোনও মতে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে আসতে হয় উত্তরপ্রদেশে মেয়ের বাড়ি থেকে।

গার্ডেনরিচ রামনগর লেনের পুরনো বাসিন্দা ব্যবসায়ী প্রসাদ খান (চৌধুরি)। গার্ডেনরিচ থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত বছর জুন মাসে তিনি তাঁর বড় ছেলে মনোজিতের বিয়ের জন্য একটি নামী ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলেন ছেলের নামে। সেই সূত্র ধরেই অক্টোবর মাসে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় উত্তরপ্রদেশের লাখিমপুর খেরির বাসিন্দা ঐশ্বর্য ভাটনগরের সঙ্গে।

সাইটের সূত্র ধরেই ঐশ্বর্য এবং মনোজিতের ফোনে যোগাযোগ হয় এবং তাঁরা রাজি হওয়ার পর মেয়ের পরিবারও বিয়েতে সম্মতি দেন। ছেলের বাবা, প্রসাদ খান বলেন, “ মেয়ে পক্ষ আমাদের বলেছিল তাঁদের গুরুদেব যদি সব দেখে সবুজ সঙ্কেত দেন তাহলে তাঁদের বিয়েতে আপত্তি নেই।” সেই অনুযায়ী নভেম্বর মাসে গুরুদেব আনন্দ ত্রিপাঠীও ছেলের বাড়ি ঘুরে গিয়ে বিয়ের পক্ষে মতামত দেন।

গুরুদেবের নির্দেশেই ওই মাসেই ছেলে মেয়ে এবং ভাইজিকে নিয়ে বিমানে লখনউ যান প্রসাদবাবু। সেখানে কনে পক্ষ তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয় কনের লাখিমপুর-খেরির বাড়িতে। সেখানে হোটেলে থাকার বন্দোবস্ত হয়। পরেরদিনই আচমকাই কনের বাড়ির আবদারে পাকা দেখা সেরে ফেলতে হয় প্রসাদবাবুদের। সেই উপলক্ষে রীতি অনুযায়ী নগদ এবং গয়না মেয়েকে উপহার দিয়ে আসেন প্রসাদবাবু।

আরও পড়ুন: রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক আরএসএস ঘনিষ্ঠ, ছবি দেখিয়ে দাবি মমতার

আরও পড়ুন: বাজেয়াপ্ত পার্টি ড্রাগে ‘মাদক নেই’, চিনা ট্যাবলেট নিয়ে নাজেহাল সিআইডি

তাঁর করা অভিযোগ অনুযায়ী, এর কিছুদিন পরেই কনের মা কলকাতায় আসেন। তাঁরা ছেলের বাড়ি দেখে যান এবং ফেরার সময় বলে যান ফাল্গুন মাসেই বিয়ের দিন ঠিক করবেন। ওই সময় প্রসাদবাবু মেয়ের মাকেও রীতি অনুযায়ী গয়না এবং নগদ উপহার দেন। প্রসাদবাবু বুধবার ফোনে বলেন, “ ওরা ফিরে যাওয়ার কয়েকদিন পরে আমরা বিয়ের দিন জানতে ফোন করলে হঠাৎই কনের পরিবার জানিয়ে দেয় তাঁরা বিয়ে দেবে না।”

উত্তরপ্রদেশে পাকা দেখার সময় দুই পরিবারের সদস্যরা। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশকে প্রসাদবাবু জানিয়েছেন, কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে ভেবে তাঁরা ছেলেকে নিয়ে ফের মেয়ের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁদের ভাটনগর পরিবার ফের জানিয়ে দেন যে তাঁরা বিয়ে দেবেন না। প্রসাদ বাবুর অভিযোগ, ‘‘ আমাদের সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করছিল ওরা। তখন আমরা বলি যে আমরা প্রায় তিন লাখ টাকার উপহার দিয়েছি মেয়ের পরিবারকে বিয়ে পাকা জেনে। তাহলে সেই টাকা ফেরত দিক মেয়ের পরিবার।” অভিযোগ সেই টাকা ফেরত দেওয়া দূরে থাক উল্টে মারধর করার হুমকি দেয় মেয়ের পরিবার। প্রসাদবাবু বলেন, “ আমার পূর্বপুরুষরা খাঁ উপাধি পেয়েছিলেন। আমি সেটা ব্যবহার করি। সেই বিষয়টা আগেই আমরা জানিয়েছিলাম মেয়ের পরিবারকে। তাঁরা নিজেরাও আমার বাড়িতে এসে দেখে গিয়েছেন আমার বাড়িতে রয়েছে কালী মন্দির। তার পরও আমরা টাকা ফেরত চাওয়ায় এলাকায় ওরা বলে আমরা মুসলমান এবং পরিচয় লুকিয়ে ওদের মেয়েকে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফলে ওই এলাকার কিছু মানুষ আমাদের উপর প্রায় হামলা করার উপক্রম করে।” কোনওমতে সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরে ছেলের পরিবার।

মনোজিৎ বলেন, “ আগে মেয়ে এবং মেয়ের পরিবার কয়েকজন আত্মীয়ের কথা বলেছিলেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন যে ভাটনগর পরিবারকে তাঁরা আদৌ চেনেন না।” স্থানীয় পুলিশের সাহায্য চেয়েও বিশেষ ফল হয়নি বলে অভিযোগ প্রসাদবাবুর। তাই তিনি গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ জানান। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, “ আমরা উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন।তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ওই এলাকায় একটি গ্যাং রয়েছে যারা ঠিক ওই ভাবেই বিয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে। রীতিমত লুঠপাটও করে। এ ক্ষেত্রেও সে রকম কোনও গ্যাং কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE