ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন স্বয়ং পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। পুরসভায় সমস্ত দফতরের পদস্থ কর্তাদের এক বৈঠকে ডেকে বলেছিলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই কেন ডুবে যাবে ঠনঠনিয়া-আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকা, তা খুঁজে বার করুন। তাঁর সেই নির্দেশ মতো কারণ খুঁজতে গিয়ে হতবাক নিকাশি দফতরের কতার্রা। ঠনঠনিয়া মন্দির চত্বরের চার পাশ জুড়ে থাকা বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট, রাজেন মল্লিক রোড, বিধান সরণির গোটা তিরিশ ম্যানহোল দেখে কপালে চোখ ওঠে তাঁদের। কারণ, সেগুলি দিয়ে জল গলারও উপায় নেই। সবটাই জঞ্জাল-প্লাস্টিকে ঠাসা। সরেজমিন দেখতে যাওয়া ওই দলের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘পাথর, লোহা বা শক্ত কাদায় একেবারে ভর্তি ম্যানহোলের গর্ত। তার মধ্যে রয়েছে ভর্তি প্লাস্টিক। জল বেরোবে কী করে!’’
কেন এত কাল তা দেখা হয়নি? কেনই বা পরিষ্কার হয়নি ওই সব ম্যানহোল? সেই প্রশ্ন এ বার উঠেছে পুরসভার অন্দরমহলে। আর তাতে আরও ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিয়েছেন পুরসভার দুই কাউন্সিলর স্মিতা বক্সী এবং সাধনা বসু। স্মিতাদেবী এলাকার বিধায়ক, আর সাধনাদেবী স্থানীয় কাউন্সিলর। ঠনঠনিয়া নিয়ে কমিশনারের নির্দেশের পরে পুরসভার একটি দল সেখানে গিয়েছিল। সে সময়ে সেখানে হাজির ছিলেন এলাকার বিধায়ক এবং কাউন্সিলরও। পরপর ঢাকনা
খুলতেই দেখা গেল ম্যানহোলের সেই হাল। যা দেখে জনপ্রতিনিধিরাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় এলাকার জল সরবে কী ভাবে, প্রশ্ন তোলেন তাঁরাই।
অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে আমহার্স্ট স্ট্রিটে, এমন কথা দীর্ঘকাল ধরেই প্রচলিত কলকাতায়। কিন্তু এমন হাল কেন, এতকাল তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি পুর-প্রশাসন বা পুলিশ। এমনকী, কলকাতার বতর্মান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দিন কয়েক আগে আনন্দবাজারে প্রকাশিত ঠনঠনিয়ার জলছবি দেখে বলেছিলেন, ওখানে তো বরাবরই জল জমে, একটু বৃষ্টি হলেই। অর্থাৎ, ঠনঠনিয়া সংলগ্ন এলাকায় বানভাসি হওয়াটাই যেন ওই এলাকার স্থায়ী চিত্র। এবং বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি হবে, দুই এলাকার বাসিন্দাদের তা মেনে নেওয়াটা যেন দস্তুর।
কিন্তু এই ভোগান্তির প্রকৃত কারণ কেন খোঁজা হয়নি, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য এর জন্য দায়ী করছেন পুরসভার শাসকদের। পুর-কমিশনার যা এখন বলছেন, তা অনেক আগেই ভাবা উচিত ছিল বলে মনে করেন বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটের এক বাসিন্দা অমল রায়। ঠনঠনিয়া মন্দিরের এক সদস্যের কথায়, ‘‘সেই কবে থেকে এই হাল দেখছি। এখন সব মানিয়ে নিয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় মাটির তলা থেকে পলি তোলার কাজে। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ম্যানহোল এবং গালিপিটে জমে থাকা কাদা, পলি তোলার জন্য টেন্ডার করা হয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য এবং পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পলি তোলা হয়েছে বলে টাকাও পেয়ে যান অনেক ঠিকাদার। এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘মাটির নীচে থাকা পলি তোলা হয়েছে কি না, তা যাচাই করার উপায় শক্ত। আর সেই সুযোগ নিয়েই বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টাকা গলে যাচ্ছে পুর-প্রশাসনের।’’ ঠনঠনিয়ার ম্যানহোল ঘেঁটে তারই প্রমাণ মিলেছে বলে মনে করেন ওই কাউন্সিলর। একই হাল দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরসভা আরও অনেক ওয়ার্ডে।
তবে ওই চিত্র এ বার বদলাবে বলে দাবি পুরসভার নিকাশি দফতরের বর্তমান মেয়র পারিষদ তারক সিংহের। সম্প্রতি পুরসভার দলটির সঙ্গে তিনিও ঠনঠনিয়া এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। পরে পুরসভার নিকাশি দফতরের কর্তাদের তা সাফ করার জন্য জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি তিনি কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও জানিয়েছেন। এর পরেই ওই এলাকার ম্যানহোলগুলোয় জমে থাকা পলি, কাদা-সহ নানা আবর্জনা বার করতে ম্যানহোল ডি-সিল্টিং মেশিন লাগানো হয়েছে। শনিবার তারকবাবু জানান, আজ রবিবার ঠনঠনিয়া সংলগ্ন এলাকার অন্য রাস্তার ম্যানহোল ও গালিপিট পরীক্ষা করে দেখা হবে। প্রয়োজনে আরও কয়েকটি মেশিন পাঠিয়ে পলি পরিষ্কারের কাজ চালানো হবে। পুরকর্তাদের ধারণা, আগামী বর্ষার আগেই জলছবি বদলে যাবে ঠনঠনিয়া-আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy