গার্ডেনরিচের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। —ফাইল ছবি।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্থানীয় ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার-সহ দু’জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে কারণ দর্শানোর (শো-কজ়) নোটিস পাঠিয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই তিন ইঞ্জিনিয়ারের লিখিত বক্তব্যে পুর কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ বার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হতে চলেছে। একই সঙ্গে, বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনাস্থল আজহার মোল্লা বাগান যে বরোর অন্তর্গত, সেই ১৫ নম্বর বরো এলাকায় অভিজ্ঞ, পুরনো সিভিলইঞ্জিনিয়ারদের বদলে নবাগতদের কাজে যোগ দিতে বলা ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে পুর অন্দরেই।
গার্ডেনরিচের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যুর পরে শহরে বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছে পুর প্রশাসন। বস্তুত, কলকাতার বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নতুন নয়। এমতাবস্থায় সদ্য চাকরিতে ঢোকা পাঁচ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে ১৫ নম্বর বরোয় কাজে যোগ দিতে বলায় পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ ক্ষোভ গোপন রাখেননি।
তাঁদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সেখানে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠানো জরুরি ছিল। পরিবর্তে, ওই বরো এলাকায় মোট ন’জন ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো হলেও তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। বাকি চার জন পুরনো হলেও অতীতে বিল্ডিং বিভাগের কাজই করেননি! এই প্রসঙ্গে ‘কলকাতা পুরসভা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মানস সিংহ বলেন, ‘‘সদ্য ঘটে যাওয়া এই মাত্রার বিপর্যয়ের পরে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠানো প্রয়োজন ছিল। তার পরিবর্তে নতুনদের ওখানে কাজে পাঠানোয় এটা স্পষ্ট যে, পুর কর্তৃপক্ষ ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁরা বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে কতটা সচেতন।’’
মানসের আরও অভিযোগ, বিল্ডিং বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারদের ঠিক মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। পরিকল্পনা ছাড়াই বরোভিত্তিক তাঁদের বদলিতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এই বিষয়ে আগামী বুধবার ডিজি (বিল্ডিং)-এর কাছে সংগঠনের তরফে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের আরও অভিযোগ, ১৫ নম্বর বরো এলাকায় দায়িত্ব পাওয়া ইঞ্জিনিয়ারদের রবিবার, ছুটির দিনেও ডিউটি করতে হয়েছে। আজ, সোমবার দোলের ছুটিতে গণপরিবহণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কাজে আসতে হবে।
যদিও এ বিষয়ে পুর বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিকের পাল্টা যুক্তি, ‘‘কাউকে না কাউকে তো কাজ করতেই হবে। তা ছাড়া দেখা গিয়েছে, বেআইনি নির্মাণের কাজ করার জন্য ছুটির দিনগুলি বেছে নেন নির্মাণকারীরা। তাই এ বার থেকে ছুটির দিনে রস্টারের ভিত্তিতে ডিউটিতে থাকবেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে ইতিমধ্যেই শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের বলা হয়েছে, কোথাও অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে কি না তা দেখতে তাঁদের এলাকায় ঘুরতে হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় অফিসে ঢুকে তাঁদের ওই পরিদর্শন শুরু করতে হবে। বন্দর এলাকার পাশাপাশি একবালপুর, খিদিরপুর, কসবা, ইএম বাইপাস, পার্ক সার্কাস, কড়েয়া, নারকেলডাঙা, রাজাবাজার, তিলজলা-তপসিয়া— এই সব এলাকায় কর্মরত বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পুর কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ প্রথমেই ভেঙে ফেলার জন্য সচেষ্ট হতে হবে তাঁদের। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে ওই কাজ করবেন। কখনও, কোনও স্তর থেকে অসহযোগিতা এলে বিষয়টি জানাতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে। তিনি সব জানাবেন লালবাজারের শীর্ষ স্তরে।
পুরসভার পরিবেশ বিভাগের কর্মীদেরও বলা হয়েছে, পুকুর ভরাট কঠোর হাতে রুখতে হবে। গার্ডেনরিচের যে বহুতল ভেঙে ১২ জনের প্রাণ গিয়েছে, সেটি পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছিল বলেজানিয়েছেন স্থানীয়েরাই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy