Advertisement
E-Paper

কেকে-র মৃত্যুর বছর পার, জলসার নিয়ম এখনও রয়ে গিয়েছে খাতায়কলমেই

গত বছরের ৩১ মে নজরুল মঞ্চে উত্তর কলকাতার একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিলেন কেকে। সেখানে পুলিশ এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দর্শকদের একাংশের রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়।

An image of KK

গত বছরের ৩১ মে কলকাতায় কলেজ ফেস্টে গান করতে এসে বলিউড গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র মৃত্যু হয়। ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৩ ০৬:৪২
Share
Save

বিপর্যয় বা গাফিলতির কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে বহু ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম তৈরি হয়। কিন্তু সময় যত গড়ায়, সেই সব নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই শুধু খাতায়কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যায় বলে অভিযোগ। কলকাতায় কলেজ ফেস্টে গান করতে এসে বলিউড গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র মৃত্যুর ঘটনাতেও কি তেমনই ব্যাপার হয়েছে?

প্রশ্নটা উঠছে এবং জোরালো ভাবে উঠছে সম্প্রতি শহরের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে হওয়া জলসার পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে। যেখানে উপস্থিত অধিকাংশেরই অভিযোগ, ‘‘অনুষ্ঠানের আনন্দে গা-ভাসানোর নামে নিয়ম ভাঙার রোগ চলছেই। দর্শকের আব্দার মেটানোর নামে একই ভাবে ভুগতে হচ্ছে শিল্পীদের।’’

গত বছরের ৩১ মে নজরুল মঞ্চে উত্তর কলকাতার একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিলেন কেকে। সেখানে পুলিশ এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দর্শকদের একাংশের রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। আড়াই হাজার আসনবিশিষ্ট ওই প্রেক্ষাগৃহে প্রায় তিন গুণ দর্শক ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। শেষে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হলে শুরু হয় বাঁশ, ইট, পাথর ছোড়া। তার মধ্যেই রীতিমতো ঘামতে ঘামতে অনুষ্ঠান করতে দেখা যায় কেকে-কে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী। মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং নজরুল মঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠে। অব্যবস্থার একাধিক অভিযোগে মামলা হয় আদালতে। নিউ মার্কেট থানাও মামলা রুজু করে তদন্তে নামে।

নজরুল মঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র তরফে কমিটি গড়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গেই প্রকাশ করা হয় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি)। তাতে বলা হয়, আসন সংখ্যার ভিত্তিতে গেট পাস দেওয়া হবে। টিকিটের সঙ্গে দর্শকেরা পাবেন সেই গেট পাস। সেটি না থাকলে দর্শককে মূল গেটেই আটকানো হবে। মঞ্চের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে। থাকবেন চিকিৎসকও। মঞ্চে যাতে গরমের সমস্যা না হয়, তার জন্য জলসা চলাকালীন ছ’টি পোর্টেবল এসি বা স্ট্যান্ড ফ্যান অথবা কুলার চালু থাকবে। শিল্পীর কাছে যাতে কোনও দর্শক পৌঁছতে না পারেন, সে জন্য বাউন্সারদের একটি দল থাকবে মঞ্চের কাছেই। অনুষ্ঠানের অন্তত ১৫ দিন আগে স্থানীয় থানা, উদ্যোক্তা, শিল্পীর সেক্রেটারি এবং নজরুল মঞ্চ কর্তৃপক্ষ কথা বলে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করবেন।

নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাওয়া হচ্ছে জানিয়ে বুধবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে দেখা যায়, এমন নিয়মের একটি বা বড়জোর দু'টি এখন মানা হচ্ছে। জানা গেল, নজরুল মঞ্চ এখন কেএমডিএ-র ‘এস্টেট অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের অধীনে। ওই বিভাগের এক কর্মী দীপ্ত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হলের মোট আসন সংখ্যা ২৪৮২ হলেও ২০০০টি আসনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ধোঁয়া ছড়ায়, এমন কিছু মঞ্চে তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাখতে হচ্ছে চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স। আর উদ্যোক্তারা পারলে বাউন্সার রাখছেন।’’ পারলে কেন? তবে কি নির্দেশে কড়াকড়ি নেই?

নজরুল মঞ্চের এক কর্মী তথা কেকে-র মৃত্যুর দিনের ঘটনার সাক্ষী চন্দন মাইতি বললেন, ‘‘পুরসভা, দমকল, লালবাজার থেকে এখন অনুষ্ঠানের অনুমতি নিতে হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হচ্ছে কি না, ডাক্তার কে থাকছেন— সে সব জানতে চাওয়া হচ্ছে অনুমতি দেওয়ার সময়ে। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই সবটা করে উঠতে পারেন না।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘১২ জুন থেকে মঞ্চ সংস্কারের কাজ হবে। তার পরে দেখার, এই কড়াকড়ি কার্যকর হবে, না কি নতুন করে আরও কড়া নিয়ম বলবৎ হবে।’’

তবে এই পরিস্থিতি শহরের ছোট-বড় প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহেই। মহাজাতি সদনের এক কর্মী সুরবেক অধিকারী বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান হলে স্থানীয় থানাকে জানাতে হয়। এর বেশি কিছুর দরকার পড়ে না।’’ জি ডি বিড়লা সভাগার কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের লাইসেন্স এবং আয়োজনের সব দিক দেখে তবেই অনুমতি দেওয়া হয়। আর কত দর্শক আসতে পারেন, তা নিয়ে আগাম লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়। এ ব্যাপারে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘যতটা সম্ভব, সব দিক দেখে এগোনো হয়। তা ছাড়া, কেকে-র মৃত্যুর পরে তেমন কোনও ঘটনাও তো সামনে আসেনি।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KK Singer KK Death Death Anniversary Music Concert

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}