ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে এই ভয়ে ডিম খাওয়া ছেড়েছেন বহু হার্টের রোগী। স্বাস্থ্যসচেতন কেউ কেউ আবার কোলেস্টেরল এড়াতে ডিম খান কুসুম বাদ দিয়ে। কিন্তু সত্যিই কি ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে? নুন ছাড়া খাবারের মতোই কুসুম ছাড়া ডিমও ‘আলুনি’ স্বাদের। যাঁরা ডিম খেতে ভালবাসেন, তাঁরা অমন ডিম নাক সিঁটকে খান। সেই কষ্ট কি সহ্য করার কোনও দরকার আছে?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডিমের কুসুমেই রয়েছে অর্ধেক পুষ্টিগুণ। সাদা অংশে যা থাকে তা মূলত প্রোটিন। অন্য দিকে, ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। ডিমে যে বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন পাওয়া যায়, তারও সবটাই থাকে কুসুমে। পাশাপাশি ভিটামিন এ, ই এবং কে, জ়িঙ্ক, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালশিয়াম, কোলিনও আছে কুসুমে। চোখের জন্য উপযোগী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসও কুসুমে আছে। একই সঙ্গে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলও। প্রশ্ন হল, সেই কোলেস্টেরল এড়াতে কি সমস্ত পুষ্টিগুণ বাদ দেবেন? তা হলে ডিম খেয়ে লাভ কিসের!

ছবি: সংগৃহীত।
সম্ভবত এই ভাবনা থেকেই ডিম খেলে কোলেস্টেরল সত্যিই বাড়ে কি না তা নিজের উপর পরীক্ষা করে দেখেছিলেন চিকিৎসক এবং এন্ডোক্রোনোলজিস্ট দীপ দত্ত। সেই পরীক্ষার ফল তিনি প্রকাশ করেছেন এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের মাধ্যমে। যা ডিম নিয়ে অনেক প্রচলিত ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
কী ভাবে পরীক্ষা ও কী ফল?
চিকিৎসক এক্সের পোস্টে জানিয়েছেন, টানা দেড় বছর ধরে তিনি প্রতি দিন ৪টি করে কুসুমসমেত ডিম খেয়েছেন। অর্থাৎ সপ্তাহে আঠাশটি। ১৮ মাস পরে নিজের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করান তিনি। রিপোর্টের ছবি দিয়ে চিকিৎসক লিখেছেন, ‘‘দেড় বছর ধরে রোজ ৪টে করে ডিম খেয়েও আবার কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডে কোনও প্রভাব পড়েনি। উল্টে ‘ভাল কোলেস্টেরল’ বা এইচডিএল বেড়ছে।’’

চিকিৎসকের সেই পোস্ট। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল।
ডিম খেয়ে ওজনও কমেছে!
শুধু তা-ই নয়, চিকিৎসক জানিয়েছেন, ডিম খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে এবং যাপনে কিছু পরিবর্তন এনে গত দেড় বছরে তিনি ১২ কেজি ওজনও ঝরিয়েছেন। দীপ লিখেছেন, ‘‘গত ৯ মাস ধরে ডিম খাওয়ার পাশাপাশি সারা দিনের খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছিলাম। মূলত স্যালাড খেয়েছি। প্রতি দিন অন্তত ৩-৫ কিলোমিটার হেঁটেছি। তবে কোনও ওষুধ খাইনি।’’
তবে কি ডিমে কোলেস্টেরল বাড়ে না?
এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে, ডিমে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। প্রতিটি কুসুমে ১৮৬ মিলিগ্রাম করে কোলেস্টেরল থাকে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা বলছে, প্রাণিজ খাবার থেকে যে ‘ডায়েটারি কোলেস্টেরল’ শরীরে যায়, তা রক্তের কোলেস্টেরলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় একটা তফাত ঘটায় না। লিভার কোলেস্টেরল তৈরি করে। তবে যখন শরীর খাবার থেকে কোলেস্টেরল পায়, তখন লিভার কম কোলেস্টেরল তৈরি করে।

ছবি: সংগৃহীত।
বিভিন্ন গবেষণায় এ-ও দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত ডিম খাওয়ার পরে ৭০ শতাংশ মানুষের কোলেস্টেরল বাড়েনি। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে যাঁদের কোলেস্টেরল বেড়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির মাত্রা খুব বেশি নয়। আর তা হার্টের স্বাস্থ্যেও কোনও খারাপ প্রভাব ফেলেনি।
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডিম আদতে শরীরে ‘ভাল কোলেস্টেরলে’রই জোগান দেয়। ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বা এলডিএল তৈরি হয় প্রক্রিয়াজাত খাবার, ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত চিনি থেকে।