Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জেসপে সক্রিয় ছিল লোহা মাফিয়ারাও, বলছে পুলিশ

নেহাত ছিঁচকেদের কাজ নয়, বরং জেসপকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল বড় মাপের চুরির চক্র। তদন্তে নেমে এমন জানতে পেরেছেন সিআইডির তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

নেহাত ছিঁচকেদের কাজ নয়, বরং জেসপকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল বড় মাপের চুরির চক্র। তদন্তে নেমে এমন জানতে পেরেছেন সিআইডির তদন্তকারীরা। তাঁরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা জেসপের যন্ত্রাংশ, লোহালক্কড় সরানোর পিছনে একটি বড় মাপের চক্র কাজ করছিল। জড়িত ছিল লোহালক্ক়ড় কেনার সঙ্গে জড়িত কয়েক জন স্ক্র্যাপ মাফিয়াও।

জেসপের মালপত্র চুরির তদন্তে নেমে শনিবার রাত পর্যন্ত জেলা পুলিশ এবং সিআইডি পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে কয়েক জন ছোট মাপের চোর ছাড়াও গৌতম মণ্ডল নামে মানিকতলা এলাকার এক চোরাই মালের ক্রেতার নামও উঠে এসেছে। সিআইডি সূত্রের খবর, গৌতমকে জেরা করেই এই চুরিচক্রের লোকেদের খোঁজ মিলেছে। তেমনই জানা গিয়েছে, গৌতমের মতো ওই চোরাই লোহালক্ক়ড় কিনত হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন লোহাপট্টির কয়েক জন ব্যবসায়ীও। তবে এই চুরিচক্রের পাণ্ডা কিংবা ব্যবসায়ীদের কাউকেই পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, গৌতমের মতো লোহা ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনমতো লোহালক্ক়ড়ের অর্ডার দিত ওই চুরিচক্রের চাঁইদের। তারা কারখানা চত্বরের ভিতর থেকে লরি বা ট্রাকে করে সেই মাল বের করে এনে পৌছে দিত নির্দিষ্ট জায়গায়। এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, জেসপ থেকে মালপত্র সরানোর সময় চাউর করে দিত যে রাজ্যের অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় ওই সব লোহালক্কড় বা যন্ত্রাংশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ওই চক্রটি বন্ধ বিভিন্ন কারখানার ভিতর থেকে মাল চুরি করতে ওস্তাদ। কিন্তু যে কায়দায় জেসপ থেকে মালপত্র সরানো হত তাতে পুলিশের অনুমান, কারখানার দায়িত্বে থাকা বেশ কিছু কর্মী এবং স্থানীয় দুষ্কৃতীদেরও ওই চক্রের চাঁইরা হাত করেছিল। মূলত তাদের সাহায্য নিয়েই কারখানার মাল লরি বোঝাই হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন লোহাপট্টিতে চলে যেত। কিন্তু পুলিশ আটকাত না কেন? এলাকার এত বড় কারখানা থেকে মালপত্র সরানো হচ্ছে অথচ পুলিশ টের পাবে না, এমন তো হতে পারে না!

রাজ্য পুলিশের কর্তাদের অনেকেই বলছেন, এই তদন্তে দমদম থানা এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ, পুলিশের একাংশের মদত ছাড়া দিনের পর দিন এমন চুরি চলতে পারে না। ‘‘শুধু দমদম থানা নয়, ব্যারাকপুর কমিশনারেটের শীর্ষকর্তাদের একাংশ নিশ্চয়ই এই লাগাতার চুরির ঘটনা জানতেন। তা হলে আটকানো হল না কেন?’’ প্রশ্ন রাজ্য পুলিশের এক কর্তার।

দমদম থানা অবশ্য চুরির ঘটনায় নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলেছে। জেসপ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে তারা জানিয়েছে, লাগাতার চুরি হলেও জেসপের তরফে কোনও অভিযোগ হয়নি। কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করা হয়নি কেন, সে ব্যাপারে কোনও উপযুক্ত যুক্তি মেলেনি। আগুন লাগার ঘটনা নিয়েও অন্তর্ঘাতের কথা জানিয়েছে দমদম থানা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার দিন লোহার শেডের তলায় আগুন লেগেছিল। সেখানে কোনও কাঠের আসবাবপত্র ছিল না। শুধু লোহার যন্ত্রাংশ ছিল সেখানে। কিন্তু সেগুলি দাহ্য নয়। উল্টে ওই এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় মোবিল বা তেল জাতীয় কিছু পদার্থের নমুনা মিলেছে। ওই তেল সেখানে পড়ে থাকার কথা নয়। এ ছাড়াও তদন্তকারীদের দাবি, গত ৩ বছর ধরে কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে শর্ট সার্কিট থেকেও বিদ্যুৎ লাগার সম্ভাবনাও নেই। তাই কারখানার কর্মীদের সহায়তা ছাড়া ওই ঘটনা ঘটা সম্ভব নয় বলে অনুমান সিআইডি-র।

সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্ত নেমে তাঁরা আরও জেনেছেন, কারখানায় তিন-চারটি জায়গায় আগুনের উৎস ছিল। এবং সব জায়গায় একই সময় আগুনের ফুলকিও দেখা গিয়েছিল, যা অন্তর্ঘাত ছাড়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। সে সম্পর্কে তথ্য পেতেই জেসপ কর্তৃপক্ষ-সহ কারখানার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Iron Mafia Jessop factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE