রোগীহীন শয্যা। — নিজস্ব চিত্র
চারটি নতুন লেবার টেবিল পড়ে থেকে থেকে জং ধরতে চলেছে। কয়েক বছর আগে কেনা চিকিৎসার একাধিক সরঞ্জামের মোড়কই খোলা হয়নি। এসি থাকলেও তা চালানোর দরকার হয়নি। ইন্ডোরে রোগী ভর্তি বন্ধ সাত বছর।
যেখানে সরকারি হাসপাতালগুলির প্রসূতি ওয়ার্ডে একই শয্যায় ভাগাভাগি করে থাকতে হয় তিন-চার জনকে, শয্যা ছাপিয়ে রোগিণীর ঠাঁই হয় মেঝেতেও, সেখানেই খাস কলকাতার একটি সরকারি প্রসূতি কেন্দ্রে যাবতীয় পরিকাঠামো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তালাবন্ধ অপারেশন থিয়েটারও। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ভবন, কারওরই হেলদোল নেই। কাগজ-কলমে আরজিকরের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস রাজা মণীন্দ্র রোডের ইন্দিরা মাতৃ ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালের ছবিটা এমনই।
সকাল ১১টা। হাসপাতালে ঢুকে দেখা গেল, ওটি সংলগ্ন বাথরুমের টাইলসের মেঝেয় পুরু ধুলোর আস্তরণ। নতুন গিজারের গা থেকে নেমেছে ঝুল। ফাঁকা পড়ে লোহার শয্যা। ইমার্জেন্সি লেখা বাড়িতেও ঝুলছে তালা। হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে আগাছার জঙ্গল।
আগে যেটি ছিল অ্যাম্বুল্যান্স রাখার ঘর, এখন তা বাতিল দ্রব্যের গুদাম। টিমটিমিয়ে চলছে আউটডোর। এক সময়ে দিনে ৬০-৭০ জন রোগী আসতেন। এখন মেরেকেটে ৩ থেকে ৪।
১৯৭৫-এ রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজা হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিষেবা শুরু হয়ে যায়। আটের দশক পর্যন্ত রমরমিয়ে চলছিল হাসপাতালটি। অবনতি শুরু নয়ের দশক থেকে। বাম আমলের শেষ দিকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তথা আরজিকরের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অসীম দাশগুপ্ত উদ্যোগী হয়ে এই হাসপাতালকে আরজিকরের সঙ্গে জুড়ে দেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তার পরে মাস কয়েক ঠিকঠাক চলেছিল। কিন্তু ফের পরিষেবা পৌঁছে যায় তলানিতে।
এক কর্মী জানান, ২০১০ থেকে বন্ধ রোগী ভর্তি। সাত বছর আগে আরজিকর তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা করে এই হাসপাতালকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আরজিকর চাপ কমাতে এখানে রোগী পাঠানোর কথা বলেছিল। সেই মতো লেবার রুম ও ওটি ঢেলে সাজা হয়। বসে নতুন যন্ত্রও। কয়েক বছর আগে এখান থেকে কয়েক জন চিকিৎসক ও নার্সকে তুলে অবিনাশ দত্ত মাত সদনে পাঠানো হয়েছে। ফলে লোকবলও কম।
আরজিকরের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল অবশ্য দাবি করেছেন, ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা বাতিল হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ভবন থেকে পরিদর্শক দলও এসেছিল।’’ কাজ কবে শুরু হবে, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রবেশপথের সাইনবোর্ডে আরজিকরের নাম উল্লেখ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কোনও কাজই হয়নি এই ক’বছরে। কাজ বলতে, হাসপাতাল চত্বরের একটি ভবন সংস্কার করে আরজিকরের শিক্ষানবিশ নার্সদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা।
কেন সব থেকেও এ ভাবে ‘নেই’ হয়ে রয়েছে ইন্দিরা মাতৃ সদন? সুপার শঙ্করপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘একাধিক প্রস্তাব এসেছে। আগে শুনেছিলাম স্ত্রী-রোগ বিভাগ হবে। কখনও শুনেছি বার্ন ইউনিট হবে। সম্প্রতি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের কথাও হচ্ছে। কিন্তু কোনও কিছুই কার্যকরী হয়নি।’’ কেন? উত্তর মেলেনি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিয়েছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই সরঞ্জাম কিনে ফেলা হয়েছিল। সেগুলিই পড়ে আছে। তিনিও দাবি করেছেন, ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক হবে। কিন্তু কবে, জবাব নেই তাঁর কাছেও।
ফলে সেজেগুজে বসে থাকা ইন্দিরা মাতৃ সদনের অন্ধকার কবে কাটবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy