Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শহরে বন্ধ রেস্তোরাঁ, ব্যবসা বিদেশে বসে

ফিনল্যান্ড, সুইডেনের মতো ইউরোপীয় দেশে খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা দস্তুর।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

পচা, বাসি, জীবাণু ভর্তি খাবার মেলায় রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা কেড়ে নিয়েছে ট্রেড লাইসেন্সও। কিন্তু, দমদমের মতিঝিল রোডের সেই রেস্তোরাঁর মালিক বরুণ চৌধুরী ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে জমিয়ে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)। এমনকী একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ষাট ছুঁই ছুঁই ওই ব্যক্তি এখন ফিনল্যান্ডের নাগরিক। ইবি জানাচ্ছে, এই তথ্য পাওয়ার পরেই ইন্ডিয়া লর্ড রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যারাকপুর আদালতে চার্জশিট পেশ শেষ মুহূর্তে আটকে গিয়েছে।

ফিনল্যান্ড, সুইডেনের মতো ইউরোপীয় দেশে খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা দস্তুর। যিনি ওই সব দেশে রেস্তোরাঁর মালিক, তাঁরই দমদমের রেস্তোরাঁয় মুরগির ঠ্যাঙে কলিফর্মের মতো ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া, খোয়া ক্ষীরে ফর্মালিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক কী ভাবে থাকে, সেটা ভেবে বিস্মিত তদন্তকারীরা। এক অফিসারের কথায়, ‘‘ওই সব দেশের তুলনায় আমরা যে খাবারের ব্যাপারে কতটা উদাসীন, সেটা বোঝা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর, খাদ্য দফতর, পুরসভা এবং আমাদের তোয়াক্কা না করে কত রেস্তোরাঁ যে এমন অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে, তার হিসেব কে রাখে!’’

ইবি জেনেছে, দমদমের বাসিন্দা বরুণ নয়ের দশকে একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি পেয়ে ফিনল্যান্ড পাড়ি দেন। তবে কোন শহরে, সেটা এখনও

জানা যায়নি। ক্রমে বরুণ মোটা বেতনের কর্মীতে উন্নত হন। বছর পাঁচেকের মধ্যে ফিনল্যান্ডের সেই রেস্তোরাঁরই মালিক হন তিনি। সেখানে আরও রেস্তোরাঁ খোলেন। তার পরে তিনি রেস্তোরাঁ তৈরি করেন ফিনল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ সুইডেনেও। ধীরে ধীরে ওই ব্যক্তি ফিনল্যান্ডের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বলে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, বিদেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার পরেও বছরে অন্তত তিন-চার বার তাঁর কলকাতায় যাতায়াত আছে। এখানে তাঁর প্রোমোটিংয়েরও ব্যবসা আছে। দমদম ছাড়াও বরুণের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে মহেশতলায়।

মতিঝিল রোডের রেস্তোরাঁয় ইবি এবং দক্ষিণ দমদম পুরসভা হানা দেয় ১৯ মে। ওই দফায় অন্তত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরুণ এই রাজ্যেই ছিলেন বলে দাবি পুলিশের। তদন্তে জানা গিয়েছে, বরুণের মেয়ে থাকেন সুইডেনে, ছেলে ইংল্যান্ডে। দমদমের রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার পরে বরুণ কয়েক বার সুইডেন থেকে এখানকার কয়েক জন ঘনিষ্ঠকে ফোন করেছিলেন বলে জেনেছে ইবি।

ইবি-র বক্তব্য, বরুণ চৌধুরী সত্যিই বিদেশি নাগরিক হলে তিনি কোন শহরের বাসিন্দা, সেটা জেনে ‘লেটার্স রোগেটরি’ পাঠাতে হবে। অর্থাৎ ব্যারাকপুর আদালত ওই ব্যক্তিকে হাজির করানোর অনুরোধ জানিয়ে সেই শহরের আদালতকে চিঠি পাঠাবে। তার পরে হুলিয়া, রেড কর্নার নোটিস জারিও করতে হবে বরুণের নামে। সে জন্য বৃহস্পতিবার চার্জশিট দেওয়ার কথা থাকলেও তা আটকে গিয়েছে। বরুণ সত্যিই বিদেশি নাগরিক কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে এখানে তাঁর আয়কর সংক্রান্ত নথিও খতিয়ে দেখবে ইবি।

অন্য বিষয়গুলি:

Restaurant Dum Dum Illegal Business Finland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE