Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

নারী দিবসে উৎসব কীসের, তরজা দিনভর

প্রেম কিংবা বন্ধুত্ব, যে কোনও সম্পর্কের জন্যই রয়েছে বিশেষ দিন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, বিশেষ দিনে আটকে রেখে নয়, ফি দিন সম্পর্কগুলোর মর্যাদা দেওয়ার  মধ্যেই রয়েছে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার রসদ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

ঘুম থেকে উঠেই কেউ কেউ ফেসবুকের টাইমলাইনে নারী দিবসের শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে ছবি আপলোড করেছেন। কেউ আবার সেখানেই সাফ জানিয়েছেন, বছরভর নির্যাতনের মলম হিসেবে বন্ধ হোক এক দিনের হুল্লোড়। উৎসব পালনের চেনা ছক ভেঙে উদ্‌যাপনের নতুন ধারণা খুঁজতে এ ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চলল দিনভরের তরজা।

৮ মার্চ মহিলাদের জন্য আলাদা একটি দিন হিসেবে পালন করা নিয়ে তর্ক নতুন কিছু নয়। সেই বিতর্কেই নতুন রসদ জুগিয়েছে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও। তার মাধ্যমেই ফেসবুক, টুইটার হোয়াটসঅ্যাপে উঠেছে ‘#লেটস আনসেলিব্রেট’-এর ঢেউ। কোন পথে পালন হবে নারী দিবস, তা ঘিরে আবারও প্রশ্ন উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার তরজায়। যা দেখে-শুনে নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষের বক্তব্য, নারীর অধিকারের লড়াইয়ে এই দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে ম্লান করার কৌশলের নাম নারী দিবসের উৎসব। তাঁর কথায়, ‘‘গয়না কিংবা জামাকাপড়ে বিশেষ ছাড়ের উৎসব আসলে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে ভোঁতা করার অস্ত্র। খাতায়-কলমের অধিকারগুলো বাস্তবে কতখানি ভোগ করা যাচ্ছে, নারী দিবস সেটা খতিয়ে দেখার দিন। তাই উৎসবে নয়, উদ্‌যাপনে কাটুক।’’

প্রেম কিংবা বন্ধুত্ব, যে কোনও সম্পর্কের জন্যই রয়েছে বিশেষ দিন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, বিশেষ দিনে আটকে রেখে নয়, ফি দিন সম্পর্কগুলোর মর্যাদা দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার রসদ। কিন্তু মাদার্স ডে কিংবা ফ্রেন্ডশিপ ডে-র সঙ্গে নারী দিবসের তুলনা চলে না বলেই মনে করেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব উইমেন্স স্টাডিস’-এর অধিকর্তা শমিতা সেন। সমাজে কিংবা ব্যক্তিজীবনে নারীর গুরুত্ব বোঝানোর দিন ৮ মার্চ নয়। তাই নারী দিবসে উৎসব বেমানান। তাঁর কথায়, ‘‘নারী দিবসের ইতিহাস শতবর্ষ প্রাচীন। তার সঙ্গে কয়েক বছর আগে উৎসবের ধারণা যুক্ত হয়েছে। এ বছর আবার ‘আনসেলিব্রেট’ প্রচার চলছে। নারী দিবস কিন্তু কোনও দিনই সেলিব্রেশনের ছিল না।’’ তিনি মনে করান, মহিলাদের কাজের পরিধি, আর্থিক ব্যবস্থায় অনেক বদল এসেছে ঠিকই। পরিবর্তিত সেই পরিস্থিতিতে অধিকারের লড়াই মাপার দিনও নারী দিবস।

কিন্তু ঘর হোক বা বাইরে, যে কোনও ক্ষেত্রে সমমর্যাদার জন্য লড়াই তো বছরভর চালিয়ে যেতে হয় মেয়েদের। তবে আলাদা একটা দিনের গুরুত্ব কী, প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। সেই লড়াইয়ের গুরুত্ব বোঝার জন্য বছরের সব দিনই হোক নারী দিবস। তাঁর কথায়, ‘‘একটি বিশেষ দিন বরাদ্দ করে নারীর লড়াই মাপা যায় না। সমাজে সমানাধিকারের দাবিতে মেয়েদের কতখানি ল়ড়াই চালাতে হয়, এক দিনের আলোচনায় সেটা ধরা যাবে না। বৈষম্যের রূপ কতখানি প্রকট, তা সকলের টের পাওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনই হোক নারী দিবস।’’

যে ভিডিও ঘিরে নতুন ছন্দ পেয়েছে নারী দিবস ঘিরে বিতর্ক, তার অন্যতম মুখ অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। এক গয়না বিপণির জন্য তৈরি সেই ভিডিওতে নারী দিবস ‘আনসেলিব্রেট’ বা ‘না উৎসবের’ জন্য সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা। তবে ব্যক্তিগত ভাবে গার্গী মনে করেন, একটা আলাদা দিন উদ্‌যাপনের জন্য থাকাই ভাল। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ ভাবে সময় বরাদ্দ করা না থাকলে, বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ভুল হয়ে যায়। ফলে মেয়েদের জন্য বিশেষ একটা দিন দাগিয়ে দেওয়া ভালই।’’ তাঁর বক্তব্য, আধুনিক সমাজে বদলেছে নারীর ভূমিকা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও কি বদলেছে নারীর মর্যাদা, সেটা ভাবার জন্যও ব্যস্ত জীবনে একটা নির্দিষ্ট দিন দরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day Women's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE