Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
জঙ্গি-সতর্কতার শহরেও পুলিশ ‘অনড়’

সুনাগরিকের বরাতে তবে হেনস্থাই

বেকবাগানের শপিং মলের কাছে কাচঘেরা বাসস্টপে পড়ে ছিল কমলা-কালো কিটব্যাগটা। আশপাশে কেউ নেই। তা হলে ব্যাগটা কার? কী আছে ওটায়? টিভিতে দেখেছি, এমন ব্যাগেই তো জঙ্গিরা বোমা রেখে পালায়। তার উপরে সাতসকালেই পঞ্জাবের খবর দেখেছি!

পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি। সোমবার, হাওড়া স্টেশনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি। সোমবার, হাওড়া স্টেশনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পিয়ালী মজুমদার (গৃহবধূ)
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

বেকবাগানের শপিং মলের কাছে কাচঘেরা বাসস্টপে পড়ে ছিল কমলা-কালো কিটব্যাগটা। আশপাশে কেউ নেই। তা হলে ব্যাগটা কার? কী আছে ওটায়?

টিভিতে দেখেছি, এমন ব্যাগেই তো জঙ্গিরা বোমা রেখে পালায়। তার উপরে সাতসকালেই পঞ্জাবের খবর দেখেছি! মলের দিকে এগোতে এগোতেও হাজারটা সন্দেহ মনের মধ্যে উঁকিঝুকি মারছিল। মনটাও খচখচ করছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বার করেছিলাম। কিন্তু ফোন করব কাকে? পথেঘাটে যানজটে আটকে পড়লে লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোলে (১০৭৩) জানাই। অগত্যা ওদেরই ফোন করতে ওপার থেকে এক জন ধরলেন— ‘‘আপনি এখনই লোকাল থানায় ফোন করুন।’’ বললাম, আমি তো লোকাল থানার নম্বর জানি না। তা ছাড়া, এটা কোন থানার এলাকা, তা-ও জানি না। এ বার জবাব, ‘‘তা হলে ১০০ ডায়ালে ফোন করুন।’’

ঠিকই তো! বিপদে পড়লে তো পুলিশ এই নম্বরেই ফোন করতে বলে। মোবাইল থেকেই এ বার ‘১০০’ ডায়ালে ফোন করলাম। তখনও বুঝিনি এই সবে শুরু।

ফের পুরো ঘটনাটা জানাতে এ বার ওপারের পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘আমি ওই এলাকা চিনি না। এখনই লালবাজার কিংবা লোকাল থানায় ফোন করুন।’’ ফের তাকেও বললাম, লোকাল থানা আমি চিনি না। ওই পুলিশকর্মী একটা নম্বর ধরিয়ে দিলেন। ২২৫৩-৫০০০।

এ বার ফোন করলাম সেই নম্বরে। ওপারে ফোন তুলেই এক জন বললেন, ‘‘ম্যাডাম, এটা তো নবান্ন-র নম্বর। আপনি লালবাজার কিংবা লোকাল থানায় জানান।’’ বারবার একই কথা শুনতে এবং বলতে এমনিই বিরক্ত লাগছিল। বললাম, এ নিয়ে তিন জায়গায় ফোন করলাম। আমি আর ফোন করব না। আপনারা যা পারেন করুন। এ বার ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘দাঁড়ান, তা হলে আপনাকে লালবাজারের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিচ্ছি।’’ দু’বার চেষ্টা করেও পাওয়া গেল না। এ বার ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘ম্যাডাম, একটু পরে আমি আপনাকে ফোন করছি।’’ মিনিট কয়েক পরে ফের ফোন। এ বার ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘ম্যাডাম, আপনিই একটু লালবাজারে জানিয়ে দিন। আপনাকে আর একটা নম্বর দিচ্ছি।’’ আমি এ বারেও ‘না’ বললাম। আবার তিনি লালবাজারের ফোন করার চেষ্টা করলেন। লাইন কেটে গেল এ বারও।

মিনিট কয়েক পরে আবার একই ভাবে চেষ্টা। এ বার লালবাজারের লাইন মিলল। ও পারে এক মহিলা। বললেন, ‘‘কী হয়েছে বলুন।’’ টানা হেনস্থায় আমার মেজাজও বিগড়ে যাচ্ছিল। তাড়াহুড়ো করে কথা বলছিলাম। তাতে মহিলা বললেন, ‘‘এত বিরক্ত হচ্ছেন কেন!’’ যাই হোক, পুরো ঘটনা শুনে তিনি বললেন, ‘‘আমি কড়েয়া থানাকে জানিয়ে দিচ্ছি।’’

দুপুর ২টো ২৬। বেকবাগানের শপিং মলের ভিতরেই মোবাইলটা বেজে উঠল। ধরতেই বুঝলাম, ফোনের ও-পারে লালবাজারের সেই মহিলা। বললেন, ‘‘ম্যাডাম, থানার লোকেরা গিয়েছিল। ওটা এক জন কাঠের মিস্ত্রির ব্যাগ। সুনাগরিকের কাজ করায় আপনাকে ধন্যবাদ।’’

নাগরিকের কর্তব্য করতেই তো ফোন করেছিলাম। কিন্তু যে ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হল, মনে হচ্ছিল যেন আমি-ই অপরাধী!

এর পরেও অবশ্য রাস্তায় বেওয়ারিশ ব্যাগ দেখলে পুলিশকে ফোন করব। তবে মনে হচ্ছে, তখনও এ ভাবেই হেনস্থা হতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE