আবছা: মুছে গিয়েছে হাম্পের রং। রবিবার, পাইকপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সর্বোচ্চ উচ্চতা চার ইঞ্চি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যদিও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় উঁচু-নিচু বিভিন্ন উচ্চতার হাম্প নজরে পড়ে। উঁচু হাম্পের কারণেই অসুবিধায় পড়ছেন গাড়িচালকেরা।
চালকদের অভিযোগ, কোনও রাস্তায় হাম্প এতই উঁচু থাকে যে তা পার হওয়ার সময়ে গাড়ি এবং মোটরবাইকের নীচে ধাক্কা লাগে। এমনও হাম্প রয়েছে যেগুলি এতটাই নিচু যে তার অস্তিত্ব বোঝা দায়। ফলে গাড়ির স্পি়ড ব্রেকার হিসেবে যে হাম্পের সৃষ্টি, আদৌ তা সঠিক ভাবে তৈরি করা হয় কিনা প্রশ্ন তা নিয়েই।
লালবাজার সূত্রের খবর, রাস্তার গুরুত্ব বুঝে হাম্পের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে কলকাতা পুলিশ। সেই মতো সেগুলি তৈরি করে কলকাতা পুরসভা। কোন রাস্তায় কতগুলি গাড়ি চলে এবং সেগুলি কত ওজনের মালপত্র বহন করে তার উপরে নির্ভর করে তৈরি হয় হাম্প। রাস্তার পাশে স্কুল, কলেজ, হাসপাতালের অবস্থান এবং এলাকার জনসংখ্যার উপরও তা নির্ভর করে। হাম্পের উচ্চতা সর্বোচ্চ চার ইঞ্চি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুরসভার এক কর্তা। পুলিশের তালিকায় থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় তিন ইঞ্চি উঁচু পরপর দু’টি হাম্প তৈরি করা হয়েছে। পাইকপাড়া, চিৎপুর, একডালিয়া-সহ বন্দর এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় উঁচু হাম্পের জন্য গাড়ি চালানোই দায়।
এক গাড়িচালক বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দূর থেকে হাম্প বোঝাই যায় না। ফলে গাড়ির গতি কমানোর সময় পাওয়া যায় না। এর জেরে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’’ যদিও বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, গাড়িচালকেরা হাম্প দেখলেও গতি কমান না। বিশেষত মোটরবাইক চালকরা তো বটেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং গাড়িচালক সকলেরই দাবি, হাম্প যেন দূর থেকে বোঝা যায়, সেটাও খেয়াল রাখা উচিত।
একডালিয়ায় গেলে দেখা যাবে, ওই রাস্তার পাশে স্কুল ও রাজ্যের এক প্রবীণ মন্ত্রীর বাড়ির রয়েছে। সেখানে রয়েছে একাধিক জোড়া হাম্প। কিন্তু সেগুলির মধ্যে কয়েকটির উচ্চতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। যে কোনও গাড়ি এবং মোটরবাইক নিয়ে হাম্প থেকে নামার সময়েই নীচের অংশে ধাক্কা লাগে। এর ফলে গা়ড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। শুধু একডালিয়া নয়, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনি, বাগবাজার থেকে চিৎপুর রেল গেটে যাওয়ার রাস্তায় একই ভাবে উঁচু হাম্প দেখতে পাওয়া যায়।
এক গাড়িচালক জানান, রাতে দূর থেকে এই হাম্পগুলি ঠিক ভাবে দেখা যায় না। ফলে সামনে থেকে গাড়ির গতি কমিয়েও জোরে ঝাঁকুনি খেতে হয়। হাম্পের উপরে যে সাদা রং করা থাকে সেগুলি উঠে যাওয়ার কারণে আরও বিপত্তি বেড়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সর্বোচ্চ চার ইঞ্চির হাম্প করার নিয়ম থাকলে তার থেকে বেশি কেন করা হয়? এর দায় এলাকাবাসীদের উপরেই চাপিয়েছেন কলকাতা পুরসভার এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারেরা হাম্প তৈরি করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে ভিড় জমান। হাম্পের উচ্চতা বাড়াতে তাঁরা রীতিমতো চাপ দেন। তখন বাধ্য হয়ে তা-ই মেনে নিতে হয়। হাম্পের উচ্চতা বেশি হলে যে অসুবিধা হতে পারে তা বোঝানো যায় না। ফলে অনেক জায়গায় ছ’ ইঞ্চিরও বেশি উঁচু হাম্প থাকে।’’ পরে এলাকাবাসীই সেগুলি নিচু করার আবেদন করলে ফের তা নিচু করে দেওয়া হয়।
তবে ওই পুর কর্তার আশ্বাস, ‘‘এ বার থেকে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাম্প তৈরি করতে যেতে হবে।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে বলেন, ‘‘যেখানে এই সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হবে। কোথায় সমস্যা রয়েছে তা বাসিন্দারাই জানালে ভাল হয়।’’ তবে পুরসভার অন্য এক কর্তা জানান, হাম্পে সাদা রং করার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। সেগুলি কেন করা হয় না? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘রং করা হয়। কিন্তু গাড়ি যেতে যেতে এবং বৃষ্টির জন্য অনেক সময়ে সেগুলি উঠে যায়। আমরা দ্রুত ফের রং করার ব্যবস্থা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy