বেহালার বড়িশা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক (বাঁ দিকে)। জ্বালিয়ে দেওয়া পুলিশের ভ্যান ক্রেনে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
বেহালায় স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক এবং স্থানীয়দের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বড়িশা হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষকও। সোমবার সকালে এই স্কুলেরই দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সৌরনীল সরকারকে পিষে দিয়ে চলে যায় একটি লরি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই পড়ুয়ার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই পড়ুয়ার বাবাও।
নিজের স্কুলের খুদে পড়ুয়ার মৃত্যুতে দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন প্রধানশিক্ষক। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “পুলিশ যদি সচেতন থাকত, তা হলে আমি আমার ছেলেটাকে হারাতাম না।” পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা এবং বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তাঁর সংযোজন, “পাশে অন্য বেসরকারি স্কুলের সামনে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু আমাদের স্কুলের সামনে থাকে না। আমাদের স্কুলে চারচাকা নিয়ে কেউ পড়তে আসে না। আসে সাইকেল নিয়ে। এই স্কুল থেকে অনেকের সাইকেল চুরি হয়েছে অতীতে, চোর ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ বড়িশা হাই স্কুলের অন্য শিক্ষকেরা জানান, তাঁদের স্কুলে প্রায় ১০০০ জন পড়ুয়া পড়ে। স্কুল শুরুর সময়ে প্রতি দিন যানজট দেখা গেলেও তা সামলাতে ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মেলে না বলে দাবি তাঁদের।
সংবাদমাধ্যমের সামনে কাঁদতে কাঁদতে প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘এই ঘটনার জন্য পুরো দায় পুলিশকেই দেব। আমরা স্কুলে ঢুকে খবর পাই আমাদের বাচ্চাটিকে পিষে মেরে দিয়েছে। আমরা গিয়ে ওর বাবাকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠাই। তখনও পুলিশ ছিল না। আমরা যখন বলছি, পুলিশ আসার পর যখন বলছি, ‘লরিটা মেরে বেরিয়ে গেল, আপনারা ধরতে পারলেন না,’ উত্তরে বলছে, ‘নম্বর নেওয়া হয়েছে।’ এত বড় ঘটনার জন্য পুলিশের গাফিলতিই দায়ী।’’
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) বিনীত গোয়েল। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনটা নয় যে ওখানে পুলিশ ছিল না বা থাকে না। অতীতের থেকে এই রাস্তায় বর্তমানে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। সেটা হয়েছে পুলিশ অফিসারেরা সচেতন থাকেন বলেই। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।’’
শুক্রবার সকালে লরির ধাক্কায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে বেহালায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ মাটিবোঝাই একটি লরি তীব্র গতিতে এসে ধাক্কা মারে প্রাথমিকের ওই পড়ুয়া এবং তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই খুদে পড়ুয়ার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তার বাবাকে। পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্ঘটনা ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বেহালা। ডায়মন্ড হারবার রোডে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় বেহালা চৌরাস্তা সংলগ্ন রাস্তায়। ওই এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ভ্যানে। বেশ কয়েকটি সরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। একটি স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের মধ্যে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy