বেহালা চৌরাস্তার কাছে পুলিশের এই ভ্যানটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। —নিজস্ব চিত্র।
পথ দুর্ঘটনায় স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ বেহালা। মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয়েরা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের ভ্যানে। বেশ কয়েকটি সরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয়দের বিক্ষোভে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ডায়মন্ড হারবার রোড। বিক্ষুব্ধ জনতার দাবি, দুর্ঘটনার পর লরিচালককে ধরা গেলেও পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও এনেছেন স্থানীয়রা। তবে সকাল ১০টা নাগাদ কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাবলাতলা থেকে ওই ঘাতক লরির চালককে গ্রেফতার করে হাওড়া ট্র্যাফিক পুলিশ। পরে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের হাতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ মাটিবোঝাই একটি লরি প্রচণ্ড গতিতে এসে ধাক্কা মারে বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়া এবং তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই খুদে পড়ুয়ার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তার বাবাকে। পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্ঘটনার পরেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে ডায়মন্ড হারবার রোডে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে বেহালা চৌরাস্তা সংলগ্ন রাস্তা। রাস্তায় আটকে প্রচুর যানবাহন। চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নামানো হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকল বাহিনীও। পুলিশের তরফে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। উন্মত্ত জনতার ছোড়া পাথরে আহত হয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন স্থানীয়ও। স্থানীয় এক মহিলার মুখে কাঁদানে গ্যাসের সেল এসে লাগায় গভীর ক্ষত হয়েছে বলে অভিযোগ। যা ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পুলিশ নিজের কাজ করে না। ঘুষ খেতে ব্যস্ত। পুলিশ সচেষ্ট হলে কখনও এমন ঘটনা ঘটতে পারে?’’
বেহালার চৌরাস্তার কাছে বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। তাই সকাল থেকেই ওই রাস্তায় পড়়ুয়া এবং অভিভাবকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণের বদলে বড় বড় ট্রাক-লরির থেকে টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় এক অভিভাবকের প্রশ্ন, ‘‘স্কুলের সামনে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে না। দূরে যারা বসে থাকে, তারা হাতে সারা ক্ষণ ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে। কোথায় কী হচ্ছে তার কোনও খেয়াল থাকে না।’’
বড়িশা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘আমার একটি ছেলেকে এই ভাবে হারাতে হবে বিশ্বাস করতে পারছি না। পুলিশ যদি সচেতন হত, তা হলে এই ঘটনা ঘটত না। আমাদের স্কুল থেকে এর আগে সাইকেল চুরি হয়েছিল। চোরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনার পুরো দায় পুলিশের।’’
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) বিনীত গোয়েল। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনটা নয় যে ওখানে পুলিশ ছিল না। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।’’
এই দুর্ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক পর শিশুটির মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের যে ভ্যান এবং বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দমকল এসে তা নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন নেভানোর পর সেগুলি রাস্তা থেকে সরানো হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মানুষ বীরেন রায় রোডে জমায়েত করে রয়েছেন। অন্য দিকে, অবরোধ তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ ডায়মন্ড হারবার রোড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy