Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে হেনস্থা, আটক ডালমিয়ার নাতি

সিগন্যাল ভেঙে, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে ‘ইউ টার্ন’ নেওয়ার অভিযোগে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়িটি আটকে ছিলেন। চেয়েছিলেন চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু, চালক বা গাড়ির সওয়ারি কিশোর তা দিতে অস্বীকার করেন। উল্টে গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন্টকে ধাক্কা মারা এবং পরে ওই ট্রাফিক গার্ডের ওয়্যারলেস কেড়ে ভেঙে দেওয়ারও অভিযোগ উঠল ওই কিশোর সওয়ারি এবং তাঁর গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে।

ট্র্যাফিক সার্জেন্ট সুজয় প্রামাণিক। ছবি: রণজিত্ নন্দী।

ট্র্যাফিক সার্জেন্ট সুজয় প্রামাণিক। ছবি: রণজিত্ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ১৯:০৯
Share: Save:

সিগন্যাল ভেঙে, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে ‘ইউ টার্ন’ নেওয়ার অভিযোগে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়িটি আটকে ছিলেন। চেয়েছিলেন চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু, চালক বা গাড়ির সওয়ারি কিশোর তা দিতে অস্বীকার করেন। উল্টে গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন্টকে ধাক্কা মারা এবং পরে ওই ট্রাফিক গার্ডের ওয়্যারলেস কেড়ে ভেঙে দেওয়ারও অভিযোগ উঠল ওই কিশোর সওয়ারি এবং তাঁর গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে সেই কিশোর বিসিসিআইয়ের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার দৌহিত্র। এর পরে উচ্চ আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে ডেকে গাড়ি-সহ চালককে গ্রেফতার এবং ওই কিশোরকে আটক করল পুলিশ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে গরফা থানার কালিকাপুর মোড়ে।

এ দিন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ ইন্টার্ন বাইপাসের উপর কালিকাপুর মোড়। পুলিশ সূত্রের খবর, মোড়ে কর্তব্যরত দুই ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকা দু’জন দেখেন, একটি প্রাইভেট গাড়ি বাইপাস থেকে জোর গতিতে এসে সিগন্যাল ভেঙে বাইপাস-প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টরের কাছে এসে ‘ইউ টার্ন’ নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটিকে আটকাতে দৌড়ে যান ইস্ট-যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের ওই সার্জেন্ট সুজয় প্রামাণিক। কিন্তু তাঁকে তোয়াক্কা না করেই গাড়ির চালক আনোয়ার শাহ রোডের দিকে গাড়ি ছুটিয়ে দেন। জোর গতিতে গাড়িটিকে পালাতে দেখে সুজয়বাবু মোটরবাইক নিয়ে গাড়িটিকে ধাওয়া করেন।

ওই সার্জেন্টের কথায়, গাড়িটি আনোয়ার শাহ রোডের দিকে কিছুটা গিয়েই আবার ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে কালিকাপুরের দিকে ঘুরে যায়। পর পর ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে গাড়িটিকে ছুটতে দেখে এর পর ওই সার্জেন্ট সঙ্গে সঙ্গে গার্ডে ফোন করে সিগন্যাল বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এর পরই সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেলে সেটিকে টপকে নিজের মোটরবাইকটি দাঁড় করিয়ে সুজয়বাবু গাড়ির চালককে লাইসেন্স নিয়ে নামতে বলেন। অভিযোগ, চালক লাইসেন্স দিতে অস্বীকার করেন। গাড়ি থেকেও নামতে রাজি হননি। উল্টে চালকের পাশে বসে থাকা কিশোর গাড়ির ভিতরে বসেই জুতো-সমেত পা দু’টি গাড়ির ড্যাশ-বোর্ডে তুলে দেয় এবং কাচ নামিয়ে সার্জেন্টকে ‘তুই-তোকারি’ করে কথা বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলে অভিযোগ।

ওই সার্জেন্ট জানান, গাড়ির ভিতরে বসে এক কিশোরকে এ ধরনের আচরণ করতে দেখেই তাঁর মনে শঙ্কা হয় এবং তিনি কোনও দেরি না করেই বাইপাসে কর্তব্যরত তাঁর সিনিয়র অফিসারকে ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠান। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে খবর পাঠান গার্ডে। তত ক্ষণে অবশ্য ঘটনাস্থলে গরফা থানার কর্তব্যরত সাব-ইন্সপেক্টর অম্লান ভট্টাচার্য পৌঁছে যান। একটি গাড়িকে ঘিরে এত জন পুলিশকে দেখে আশপাশের লোকজনও জড়ো হয়ে যায়। অভিযোগ, এর পরও ওই কিশোর কিংবা গাড়ির চালক গাড়ি থেকে নামেননি। উল্টে গাড়ির চালক কিশোরের কথায় গাড়ি দিয়ে তাঁকে ঠেলতে থাকেন এবং অশ্রাব্য কথা বলতে থাকেন। এরই মাঝে ট্রাফিক গার্ডের ওসি এবং এওসি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। এত জন পুলিশকর্মীকে দেখে এর পরই ওই কিশোর গাড়ি থেকে নেমে আসে। কিন্তু অভিযোগ, কোনও মতেই গাড়ির চালকের লাইসেন্স দিতে রাজি হননি তাঁরা। উল্টে ওই কিশোর আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে সুজয়বাবুকে ধাক্কা মারতে থাকে। ট্রাফিক গার্ডের ওসি নিজে তাঁকে আটকাতে গেলে তাঁর হাতের ওয়্যারলেস কেড়ে সেটিকে ভেঙেও দেন বলে অভিযোগ। এমনকী, নিজেকে জগমোহন ডালমিয়ার ‘নাতি’ পরিচয় দেন।

এর পরে ওই কিশোরের মা বৈশালী ডালমিয়া থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিয়োগ, বিনা প্ররোচনায় পুলিশকর্মীরাই তাঁর ছেলে ও গাড়ির চালক জাকির হোসেনকে মারধর করেছে পুলিশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE