ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি পীড়নের পর থেকেই সমস্যার জালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই অবস্থায় সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র অভিমত জানতে চাইলেন আচার্য-রাজ্যপাল। বুধবার যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী রাজভবনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করেন। আচার্য তখনই অভিজিৎবাবুর কাছে এই বিষয়ে ইসি-র মতামত জানতে চান বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।
সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদনে একটি অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল নিজে অবশ্য উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর এ দিনের আলোচনার ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তাঁর কথায়, “সমাবর্তন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানাব। তবে সমাবর্তনের ব্যাপারে আগে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। কোনও সমস্যা হলে তিনি আমাকে বা রাজ্য সরকারকে জানাবেন। তখন আলোচনা হবে।” উপাচার্য অভিজিৎবাবুও এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি।
এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ রাজভবনে পৌঁছন অভিজিৎবাবু। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সময় নির্দিষ্ট ছিল বেলা সাড়ে ১২টায়। ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সোজা যাদবপুরে চলে যান তিনি। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর আলোচনার কথা ইসি-র সদস্যদের জানান উপাচার্য। ইসি-র এক সদস্য পরে বলেন, “এ দিনের বৈঠকে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়েই আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপালকে জানাতে হবে বলে আলোচ্যসূচিতে না-থাকা সত্ত্বেও সমাবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়।”
ইসি সূত্রের খবর, অধিকাংশ সদস্যই ক্যাম্পাসের ভিতরে সমাবর্তন করার পক্ষে মত দেন। তবে এ দিন ইসি-তে এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যপালকে জানাবেন বলে স্থির হয়েছে। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ পরে বলেন, “ইসি-র সদস্যেরা যে ক্যাম্পাসের ভিতরেই সমাবর্তন চান, সেটা এ দিনের আলোচনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এ বার উপাচার্য সব দিক খতিয়ে দেখে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং রাজ্যপালকে জানাবেন।” যদিও সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা ইসি-তে আলোচনার পরেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব উপাচার্যের হাতে দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই।
সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেওয়ার পক্ষপাতী নয় বলেই উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। বরাবরের মতো ক্যাম্পাসেই সমাবর্তন হবে, নাকি সেই প্রথায় ছেদ পড়বে এ দিন উপাচার্যের সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠকের পরেও সেই জট থেকে গেল।
প্রতি বছরই যাদবপুরের সমাবর্তন হয় ২৪ ডিসেম্বর। এ বারেও ওই তারিখেই তা হওয়ার কথা। ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পর থেকে ছাত্রছাত্রীরা অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবিতে সরব। ওই ঘটনার জন্য উপাচার্য ইতিমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের একাংশের বিরূপতা কাটেনি। তাঁর ইস্তফার দাবিতে তাঁরা এখনও অনড়। সমাবর্তনে অভিজিৎবাবুর হাত থেকে শংসাপত্র নেওয়া হবে না বলে পড়ুয়ারা জানিয়েছেন। এমনকী ওই অনুষ্ঠান বয়কটের কথাও ভাবছেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের ভিতরে সমাবর্তনের আয়োজন করা কতটা নিরাপদ, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। নিরাপত্তার প্রশ্নে তাই ক্যাম্পাসের বাইরে কোনও প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন করার কথা ভাবছেন তাঁরা। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার মঙ্গলবারেই যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য ফের আহ্বান জানিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের ধারণা, সমাবর্তন নির্বিঘ্ন করার জন্যই শিক্ষামন্ত্রীর এই আহ্বান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy