Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অনিয়মের অভিযোগ আবাসিকদের

রাত তখন সাড়ে বারোটা-পৌনে একটা। গড়িয়াহাট মোড়ের গুরুদাস ভবনের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দিকের অংশে আগুন লাগে।

আগুন আয়ত্তে আসার পর।—ছবি পিটিআই।

আগুন আয়ত্তে আসার পর।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

আস্ত পাঁচতলা বাড়ির পুরোটা ঘিরে প্লাস্টিকের ছাউনি। রয়েছে বিদ্যুৎ ও কেব্‌লের তারের জাল, আকাশচুম্বী বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। যে কারণে শনিবার রাতে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে নাকানি-চোবানি খেতে হয়েছে দমকলকর্মীদের। ওই বহুতলেরই একাধিক আবাসিকের অভিযোগ, প্লাস্টিকের ছাউনি ঘেরা জায়গায় বেআইনি ভাবে বিদ্যুতের লাইন টানলে তো এমনই হবে।

রাত তখন সাড়ে বারোটা-পৌনে একটা। গড়িয়াহাট মোড়ের গুরুদাস ভবনের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দিকের অংশে আগুন লাগে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে যায় একতলার এবং ফুটপাতের দোকান। কোনও ক্রমে বেঁচে যান আবাসিকেরা। কেউ ন’মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে, কেউ বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে নীচে নেমে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন একতলার দোকানদার ও হকারদের বিরুদ্ধে।

আঙুল উঠেছে, ওই বহুতলের ৪৭বি গড়িয়াহাট রোডের অংশের একটি রোলের দোকানদারের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ, পিছনের দিকের একটি ঘরে গ্যাস মজুত করে বেআইনি ভাবে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস টানে দোকানটি। এমনকি দোতলার একটি ফ্ল্যাটকে রাতারাতি রেস্তরাঁ করে ফেলেছেন ওই দোকান মালিক। সব ক’টিতেই পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস টানা হয় বলেও অভিযোগ। জনবসতিপূর্ণ বহুতলে কী ভাবে গ্যাস মজুত করে রাখার অনুমতি পেলেন ওই দোকানদার? সেই প্রশ্ন তুলেছেন আবাসিকদের অনেকেই।

মধুরিমা মুখোপাধ্যায় শনিবার রাতেই আগুন লাগার পরে দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে কোনও রকমে নীচে নেমে আসেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মাঝে মধ্যেই উপরেও গ্যাসের গন্ধ পেতাম। এত মানুষ থাকেন এখানে। সবার আগে তো আমরাই পুড়ে মরব!’’ অভিযোগ মানতে নারাজ ওই রোলের দোকানের মালিক শোভন চৌধুরী। শোভনবাবুর দাবি, ‘‘আমার দোকানের গ্যাসের লাইনের জন্য আগুন লাগেনি।’’ গ্যাস মজুত ও পাইপলাইন দমকলের নিয়ম মেনেই করেছেন বলে পাল্টা দাবি তাঁর।

ওই বাড়ির দোতলাতেই একটি কাপড়ের দোকান লাগোয়া ঘরে সপরিবার থাকেন আইনজীবী সুমন ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিপজ্জনক ভাবে প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে হকারেরা যে ভাবে ব্যবসা করছেন, প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া।’’ অন্য এক বাসিন্দা সুস্মিতা সাহার অভিযোগ, ‘‘আমার ফ্ল্যাটের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে। বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ টেনে হকারেরা ব্যবহার করছেন, এই অভিযোগ থানায় জানিয়ে কিছুই হয়নি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর বিজেপি-র তিস্তা বিশ্বাস (দাস) আবাসিকদের অভিযোগে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘হকার উচ্ছেদের কথা বলছি না। কিন্তু সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা তো করা যেতে পারে। তাতে হকার, ব্যবসায়ী এবং আবাসিকেরাও সুরক্ষিত থাকেন।’’

এ দিকে, আগুন লাগার ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। সেই আগুন বিদ্যুতের তার এবং প্লাস্টিকের ছাউনিতে ছড়িয়ে পড়ায় এত বড় আকার নিয়েছে। যদিও হকারদের নিয়ে অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হকার নীতি মেনেই ওঁদের বসানো হয়েছে।’’ যদিও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘‘গড়িয়াহাটে আগুন লাগা ওই বহুতলকে ঘিরে যে ভাবে প্লাস্টিক রয়েছে, তা বিপজ্জনক। এমন চলতে পারে না। হকারেরা যাতে ভ্রাম্যমাণ কিছুর উপরে তাঁদের জিনিস বিক্রি করতে পারতেন, তা দেখা হবে।’’

পরিস্থিতি এমন যে, দোকানদার এবং হকারদের দাপটে বহুতলের মালিকেরাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এক মালিক অসিত কুন্ডুচৌধুরী বলছেন, ‘‘এক সময়ে অভিযোগ করে লাভ না হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছি।’’ অন্য মালিক প্রবীর কুন্ডুচৌধুরীর ছেলে প্রসেনজিৎবাবু রোলের দোকানের পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কাপড়ের এক দোকান মালিকের বিরুদ্ধেও। তাঁর অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে দোতলার বারান্দা ঘিরে কাপড় মজুত করে রেখেছেন। প্রসেনজিৎবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘চারতলা নিয়ে থাকা ওই ব্যবসায়ী ভাড়া দেন না। ওঁদের উচ্ছেদ করা নিয়ে ও বেআইনি ভাবে দু’টি তলা দখল করা নিয়ে দু’টি মামলা চলছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE