Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশ সেজে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা

অভিযোগকারী জয়ন্ত জানান, তাঁদের মধ্যে অজিতের সঙ্গেই প্রথম মৃত্যুঞ্জয়ের পরিচয় হয়। বেলঘরিয়ায় অজিতদের শাড়ির দোকান রয়েছে। এক শাড়ির মহাজনের সূত্রেই অজিতের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ছেলে শুভ্রজিতকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন মৃত্যুঞ্জয়।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

‘ডিফেন্স’ লেখা স্টিকার লাগানো গাড়িতে চ়ড়েন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে পুলিশের পরিচয়পত্র। কথাবার্তা বলতে বেছে নেন বেলঘরিয়া থানার সামনের জায়গা। ওটাই নাকি তাঁর ‘এলাকা’!

এ হেন ঠাঁটবাট দেখেই মৃত্যুঞ্জয় প্রসাদ নামে এক ব্যক্তির হাতে প্রতারিত হলেন তিন জন। বুধবারই এ নিয়ে কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অশোক সাহা, অজিতকুমার সাহা এবং জয়ন্ত দাস নামে ওই তিন ব্যক্তি। তাঁদের দাবি, গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রত্যেকের থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন অভিযুক্ত। এক অভিযোগকারীর কথায়, ‘‘নথির পাশাপাশি মৃত্যুঞ্জয়ের একটি ছবিও পুলিশকে দিয়েছি।’’ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি।

অভিযোগকারী জয়ন্ত জানান, তাঁদের মধ্যে অজিতের সঙ্গেই প্রথম মৃত্যুঞ্জয়ের পরিচয় হয়। বেলঘরিয়ায় অজিতদের শাড়ির দোকান রয়েছে। এক শাড়ির মহাজনের সূত্রেই অজিতের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ছেলে শুভ্রজিতকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন মৃত্যুঞ্জয়। অভিযোগ, সে জন্য ১০ লক্ষ টাকাও নেন। বন্ধুর ছেলের চাকরি হচ্ছে জেনে বি এসসি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মেয়ে পায়েলের জন্য অজিতের মাধ্যমে মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জয়ন্ত। জয়ন্তর কথায়, ‘‘বেলঘরিয়া থানার সামনে দেখা করতেন মৃত্যুঞ্জয়। গাড়িতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্টিকার লাগানো থাকত। পুলিশের পরিচয়পত্রও দেখিয়েছিলেন। তাই আর সন্দেহ করিনি।’’ একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি অজিতের আত্মীয় অশোকেরও।

জয়ন্ত জানান, ২৮ জুলাই শুভ্রজিৎকে নিয়োগের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। বেলঘরিয়া থানার সামনে দেখা করে মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে যান অজিত, জয়ন্তেরা। শুভ্রজিৎকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যান মৃত্যুঞ্জয়। মিনিট চল্লিশ বাদে বেরিয়ে জানান, একটি নথি না থাকায় সে দিন কাজে যোগ দেওয়া হচ্ছে না। এর পরে জয়ন্তেরা কিছুটা পিছিয়ে যান। তবে পরদিনই ‘সিলেকশন সার্টিফিকেট’-এর একটি ফর্ম জয়ন্তদের হাতে তুলে দেন মৃত্যুঞ্জয়। জয়ন্তের কথায়, ‘‘অশোক-স্তম্ভ লাগানো ফর্ম দিল। তাই এক লক্ষ টাকা দিয়ে দিই।’’ এর পরে জয়ন্তদের হাতে ভুয়ো ‘সিলেকশন লেটার’ এবং ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম’ তুলে দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় দু’লক্ষ টাকা করে নেন বলে অভিযোগ। এর পরে আরও দু’লক্ষ টাকা নেওয়া হয় মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য। জয়ন্ত জানান, গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির হাসপাতালেই তাঁর মেয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করানো হয়। তাঁর মেয়ে পায়েল বলেন, ‘‘মেডিক্যাল পরীক্ষার নামে হাসপাতালে ঢুকিয়ে একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট ধরিয়ে বলা হয়, সব আগে থেকেই হয়ে আছে।’’ সে সময়ে বলা হয়েছিল, তিন জনকে এক দিনেই কাজে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।

এর পরে জয়ন্তদের কাছে ‘জয়েনিং লেটার’ বাবদ তিন লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। জয়ন্তের কথায়, ‘‘একেবারে টাকাটা দিতে রাজি হইনি। দেখেছিলাম শুভ্রজিৎকে ভিতরে ঘুরিয়ে নিয়ে চলে এসেছে। বলেছিলাম, কাজে যোগ দেওয়ার দিনে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।’’ এর পরে হোয়াট্‌সঅ্যাপের মাধ্যমে ‘জয়েনিং লেটার’ পাঠিয়ে বাকি এক লক্ষ টাকাও নিয়ে নেওয়া হয়। বলা হয়, সকলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার দিন হল ৫ ডিসেম্বর।

যদিও গত বুধবার চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে দেখা মেলেনি মৃত্যুঞ্জয়ের। বেলা ১১টা নাগাদ মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া চিঠি দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে গেলে আটক করা হয় জয়ন্তদের। পরে কাশীপুর থানার হাতে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। রাতে সেখানেই অভিযোগ দায়ের করেন অশোকেরা। কাশীপুর থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘নথিগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। অভিযুক্তের ছবিও কাজে লাগানো হচ্ছে।’’

কী করে গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির ভিতরে অবাধে লোক ঢুকিয়ে মহড়া দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ফ্যাক্টরির তরফে এ নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Job Police Gun and Shell Factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE