Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Buddhadeb Bhattacharjee Health Update

ক্রমশ সুস্থতার পথে বুদ্ধদেব, সোমবারই জানা যেতে পারে কবে পাম অ্যাভিনিউ ফিরবেন তিনি

সংক্রমণ কমাতে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছিল, তা শনিবারই বন্ধ হয়েছে। এই মুহূর্তে বুদ্ধদেব সংক্রমণমুক্ত। আপাতত তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

File image of Buddhadeb Bhattacharjee

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। — ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ২২:৫২
Share: Save:

পুরোপুরি সংক্রমণমুক্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। স্যালাইনের মাধ্যমে কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক শনিবারই বন্ধ করা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে শারীরিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। এই পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে তাঁর বাড়ি ফেরার প্রসঙ্গ। কবে বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে ফিরতে পারবেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা অবশ্য এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। কেবল জানিয়েছেন, সোমবার বৈঠকে বসবে বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল বোর্ড। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই বৈঠকেই বুদ্ধদেবের বাড়ি ফেরা নিয়ে পাকা সিদ্ধান্ত হবে।

গত শনিবার ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বুদ্ধদেবকে। শনিবার রাতে তাঁকে দেওয়া হয় ‘ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’। ৪৮ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে থাকার পর তাঁকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় ‘নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’। এখনও তাঁকে সে ভাবেই রাখা হয়েছে। তবে সাত দিন হাসপাতালে কাটানোর পর বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে অনেকটাই। সংক্রমণের কারণে তাঁকে কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। স্যালাইনের মাধ্যমে তা চলছিল এত দিন। এক সপ্তাহ পর শনিবার তাঁর অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ শেষ হয়েছে। তার পরেই খুলে ফেলা হয়েছে স্যালাইনের নলও। বস্তুত, শরীরে একাধিক নল লাগানো নিয়ে বার বার আপত্তি জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে খেতেও হচ্ছে নলের মাধ্যমেই। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘রাইলস টিউব’। স্যালাইনের নল খোলা হলেও এখনও রাইলস টিউবের মাধ্যমেই খাওয়াদাওয়া করানো হচ্ছে। সদ্য সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর যে খুব একটা খেতে পারছেন, এমন নয়। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অন্যতম ডাক্তার সৌতিক পাণ্ডা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত অতটা খিদে ওঁর নেই। দীর্ঘ অসুস্থতা, এত ওষুধপত্র, অ্যান্টিবায়োটিক, ৪৮ ঘণ্টার জন্য ভেন্টিলেশন— সব মিলিয়ে এখনও ওঁর শরীর অনেকটা ভগ্ন। এই অবস্থায় ওঁর অতটা খিদে নেই। নিজেও মুখে অতটা খেতে চাইছেন না। তাই রাইলস টিউবের উপর ভরসা করেই পুষ্টি দেওয়া হচ্ছে আর ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’টা জারি রাখা হয়েছে।’’

সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলেও দীর্ঘ হাসপাতালবাসে আবারও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কথা মাথায় রয়েছে চিকিৎসকদের। তাই হাসপাতালে বুদ্ধদেবের কেবিনে চিকিৎসাকর্মী এবং হাতেগোনা কয়েক জন ঘনিষ্ঠ ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার রাখেননি কর্তৃপক্ষ। বুদ্ধদেব যে কেবিনে আছেন, তার দেওয়াল জুড়ে রয়েছে একটি কাচের জানলা। সেই জানলা দিয়েই বুদ্ধদেবকে দেখতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। শনিবার অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি আরোপিত হয়েছে।

বুদ্ধদেব নিজে মুখে খেতে পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর মুখে সেই রুচি নেই। ফলে রাইলস টিউবই ভরসা চিকিৎসকদের। এর পাশাপাশি, বেশ কিছু দিন পর আচমকা মুখে খাওয়া শুরু করলে বিষম লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য হাসপাতালে বুদ্ধদেবের ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’ চলছিল। তা আগামিদিনেও নিয়মিত করানো হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এই ধরনের থেরাপির মধ্যে দিয়ে বুদ্ধদেবের মুখ, গলার পেশির স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে তাঁর গিলতে কোনও সমস্যা না হয় এবং বাড়ি ফিরে সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মতোই মুখ দিয়ে খেতে পারেন।

গত শনিবার থেকেই বিরতি দিয়ে দিয়ে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হচ্ছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। আগামিদিনেও তেমনই চলবে। আর তাই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে থাকলে যে বাইপ্যাপ তিনি ব্যবহার করেন, সেটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার সেই বাইপ্যাপই ব্যবহার করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের সূত্রে খবর, বাড়িতে ফেরার পর যাতে নিজস্ব বাইপ্যাপটি সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য হাসপাতালে থাকাকালীনই তা যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে। তবে সূত্রের খবর, শনিবার রাতে হাসপাতালের বাইপ্যাপই ব্যবহার করা হয়। রবিবার সকালে আবার বুদ্ধদেবের নিজস্ব বাইপ্যাপটি ব্যবহার হবে।

শনিবার বৈঠকে বসে বুদ্ধদেবের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। সেখানে বুদ্ধদেবের শারীরিক সমস্যার সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন চিকিৎসকেরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনাও করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের ‘কোর্স’ শেষ হওয়ার পর তা আর শুরু করা হয়নি। অর্থাৎ, বুদ্ধদেব এখন সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত। তবে দীর্ঘ অসুস্থতার ধকল রয়ে গিয়েছে শরীরে। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন চিকিৎসকেরা। দেখা হবে, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া কেমন থাকেন বুদ্ধদেব। হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও রূপালি বসু বলেন, ‘‘আগামী ৪৮ ঘণ্টা আমরা ওঁকে পর্যবেক্ষণে রাখব। তাই ছুটি কবে দেওয়া হবে তা নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা করিনি। সোমবার অবশ্যই ছুটি দেওয়া নিয়ে আলোচনা করব। যে রকম উন্নতি ওঁর হচ্ছে, সেটা বজায় থাকলে সোমবারই ছুটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’

হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, বুদ্ধদেব বাড়ি ফিরলেও হাসপাতাল থেকেই ‘হোম কেয়ার’ পরিষেবা দেওয়া হবে তাঁকে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে থাকবেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। যে কর্মীরা বুদ্ধদেবকে পরিষেবা দেবেন, তাঁদের আলাদা করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হাসপাতাল করছে বলে জানা গিয়েছে।

শনিবার হাসপাতালে বুদ্ধদেবকে দেখতে যান সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বুদ্ধদেবকে দেখে বেরোনোর সময় সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘বুদ্ধদা আগের থেকে অনেকটা ভাল। চিকিৎসায় ভাল ভাবে সাড়া দিচ্ছেন। যা যা সমস্যা ছিল, অনেকটাই কমে গিয়েছে। আমার বিশ্বাস, তাড়াতাড়ি ছাড়া হবে। ওঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে।’’

সেলিম বলেন, ‘‘অনেকটা ভাল আছেন। যে অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন উনি (বুদ্ধদেব), তার থেকে ভাল আছেন। আরও দু’দিন দেখবেন চিকিৎসকেরা। অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া কেমন থাকেন, সেটা দেখবেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা আশান্বিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy