(বাঁ দিকে) তৃণমূলের সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান এবং তাঁর স্বামী যশ দাশগুপ্ত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অভিজ্ঞান (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
হতে পারে পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান নিশ্চিত— ইডি তাঁকে ডাকবে না! শুক্রবার শহরের একটি ফিল্মি পার্টিতে অভিনেতা যশ দাশগুপ্তের পাশে দাঁড়িয়ে জোর দিয়ে এমনই বলেছেন নুসরত। সঙ্গে যে মুখভঙ্গিটি করেছেন, তাতে খানিকটা ‘তোয়াক্কা করি না’ মার্কা নিশ্চিন্ততাও ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করছেন। যদিও অনেকে বলেছেন, অভিনেত্রীরা ‘পেজ থ্রি’ পার্টিতে ছবি তোলানোর সময় ওই রকম করেই থাকেন। তার থেকে কোনও উপসংহারে পৌঁছনো উচিত হবে না। তবে নুসরতের ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও নুসরত খুব ‘বিধ্বস্ত’ হয়ে পড়েননি।
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে ‘প্রতারণা’ করেছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে ইডির দফতরে। প্রথমত, বাংলায় বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি যথেষ্ট সক্রিয়। দ্বিতীয়ত, ইডির কাছে ‘প্রতারিত’-দের নিয়ে গিয়েছে বিজেপি। তা সত্ত্বেও নুসরত কী করে এত নিশ্চিত যে, ইডি তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না?
অনেকে বলছেন, এর নেপথ্যে নুসরতের স্বামী তথা অভিনেতা যশের ‘যোগাযোগ’ থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, যশ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে বিজেপিতে নিয়ে গিয়েছিলেন অধুনা বিজেপির বিধায়ক এবং তৃণমূলের মধ্যে সতত দোদুল্যমান মুকুল রায়। দলে যোগ দেওয়ার পরে এই টলিউড অভিনেতাকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থীও করেছিল বিজেপি। হুগলির চণ্ডীতলা থেকে বিজেপির টিকিটে যশ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তৃণমূল প্রার্থী স্বাতী খোন্দকারের কাছে হেরে যান। ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে আর যশকে দেখা যায়নি। কিন্তু তিনি কখনও এমন ঘোষণাও করেননি যে, তিনি আর বিজেপিতে নেই। খাতায়কলমে এখনও তিনি বিজেপির সদস্য রয়েছেন কি না, তা-ও কেউ খোলসা করেননি। ফলে অনেকেই মনে করছেন, কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে যশের ‘যোগাযোগ’ এখনও অটুট। তার ভিত্তিতেই তাঁর স্ত্রী নুসরতের গলায় আত্মবিশ্বাস— ‘‘ইডি আমাকে ডাকবে না!’’
যশ অবশ্য প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলেননি। শুক্রবারের ওই পার্টির অবকাশে নুসরতের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলছে যায়-আসে না। আদালত যেটা বলবে সেটাই শেষ পর্যন্ত মানতে হবে। আদালত কী জবাব দেয়, আমাদের সেটার জন্যই অপেক্ষা করা উচিত। তার পর না হয় উত্তর দেব।’’ এর পরেই তৃণমূলের সাংসদ নুসরতকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইডি যদি তাঁকে ডেকে পাঠায়, তা হলে তিনি কী করবেন? নুসরত জোর দিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘এ জন্য ইডি আমাকে ডাকবে না।’’ তার পরে তিনি বলেন, ‘‘আমার যা বলার ছিল, তা বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছি। স্পষ্ট ভাষায় বলেছি।’’
নুসরতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটি তোলেন বিজেপির নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। তাঁর অভিযোগ, ২০১৪-’১৫ সালে ৪০০-র বেশি প্রবীণ নাগরিক একটি সংস্থায় অর্থ জমা দেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। বদলে তাঁদের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা না পেয়েছেন কোনও ফ্ল্যাট, না ফেরত পেয়েছেন টাকা। নুসরত ওই সংস্থার ‘অন্যতম ডিরেক্টর’ বলে দাবি করেছিলেন শঙ্কুদেব। তিনি জানান, এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। নুসরতের বিরুদ্ধে আদালতেও মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, আদালতের শমন পেয়েও হাজিরা দেননি সাংসদ তথা অভিনেত্রী। তাই শেষে প্রতারিতদের নিয়ে ইডি দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন শঙ্কুদেব।
সোমবার সন্ধ্যায় শঙ্কুদেবের তরফে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, ওই ‘প্রতারণার’ টাকা দিয়ে পাম অ্যাভিনিউতে নুসরত ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর পরেই বুধবার নুসরত প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেই ঋণ সুদ-সহ ফিরিয়েও দিয়েছেন। কোনও দুর্নীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। যদিও সাংবাদিকদের প্রায় কোনও প্রশ্নেরই জবাব তিনি সে দিন দেননি। তবে আনন্দবাজার অনলাইনকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার আর এক ডিরেক্টর রাকেশ সিংহ জানিয়েছিলেন, নুসরত তাঁদের সংস্থা থেকে কোনও ঋণ নেননি। নুসরতের ওই বক্তব্য শুনে তিনি স্তম্ভিত!
সম্প্রতি নিয়োগ মামলার একটি সূত্র ধরে শাসকদলের আর এক অভিনেত্রী সদস্য তথা যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে ইডি তলব করেছিল। তাঁর ফ্ল্যাট কেনা, ঋণ নেওয়ার নথি কেন্দ্রীয় সংস্থা খতিয়ে দেখেছে। ১১ ঘণ্টা ইডির দফতরে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে সায়নীকে। একই ভাবে এ বার বিজেপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে নুসরতকেও তলব করা হতে পারে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু নুসরত নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে ডাকা হবে না। যে কারণে যশের বিজেপি-যোগ নিয়ে আলোচনা এবং জল্পনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিরোধীশাসিত রাজ্য, বিশেষত বাংলায় শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ‘লেলিয়ে’ দেয়। ভোটের লড়াইয়ে পেরে না উঠে এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে হেনস্থা করা হয়। বাংলার শাসকদলের আরও বক্তব্য, যে মামলায় কোনও তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়, অনেক সময় দেখা গিয়েছে সেই একই মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে তলব করা হচ্ছে না!
এখন দেখার, নুসরত যেমন দাবি করেছেন, তা সত্যিই হয় কি না। না কি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তৃণমূলের এই সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়। তেমন হলে অবশ্য আরও দু’টি বিষয়ের অবতারণা হতে পারে। প্রথমত, যশের ‘বিজেপি-যোগ’ নিয়ে জল্পনা বন্ধ হবে। কিন্তু পাশাপাশিই এ নিয়েও আলোচনা শুরু হতে পারে যে, যশ তাঁর ‘যোগাযোগ’ ব্যবহার করেও কি স্ত্রীকে ইডির জেরা থেকে বাঁচাতে পারলেন না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy