প্রতিবাদ: মিছিলে আওয়াজ উঠল ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ছাপা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, শর্ট ড্রেস, জিনস্, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, বোরখা সকলে একজোট। শহরের ব্যস্ত পথে সমস্বরে ওঁরা বলে উঠলেন, ‘আওয়াজ দো হম এক হ্যায়’! এ ভাবেই ভোটের শহরে একসঙ্গে বক্তব্য রাখলেন ওঁরা— এই বৈষম্য আর নয়!
বৈষম্যের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মূলত পথে নেমেছিল এই মেয়েদের দল। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল করে সমান অধিকারের বার্তা দিয়ে তাঁরা গেলেন উত্তর কলকাতার শ্যাম পার্ক পর্যন্ত। প্ল্যাকার্ড, স্লোগান, ব্যানার বলল, অর্ধেক আকাশ চাই মেয়েদের। মহিলা ও রূপান্তরকামী নারীদের সেই পদযাত্রায় পা মেলাতে হাজির হলেন নানা বয়সের পুরুষেরাও। গলা মিলিয়ে তাঁরাও বললেন, ‘হমে চাহিয়ে আজাদি’।
আজাদি কীসের থেকে?
এই পদযাত্রার উদ্যোক্তাদের পক্ষে জানানো হল, বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত মহিলারাই উপলব্ধি করেছেন, দিন দিন মেয়েদের জন্য আরও বেশি প্রতিকূল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। গত পাঁচ বছরে চাকরি গিয়েছে অনেক। সেই সংখ্যার মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা। বেড়েছে যৌন হিংসা। বহু অঞ্চলে অভাব বাড়ায় পরিবারিক হিংসা থেকে শুরু করে শিক্ষার অভাব, নানা সঙ্কটে ভুগছেন মেয়েরাই। তাই রং-দল নির্বিশেষে সারা দেশের মেয়েদের একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানানো দরকার বলে মনে করেছেন আয়োজকেরা। সেই ভাবনা থেকেই নারী ও রূপান্তরকামীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন একজোট হয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে। গোটা দেশজুড়ে এ দিন সেই সব মিছিলের প্ল্যাকার্ড-ব্যানার বলল, সব প্রান্তের মেয়েদের দাবি একটাই। সাম্য চাই, শান্তি চাই। সমান শিক্ষা ও কাজের অধিকার চাই। এ শহরের পদযাত্রায় শামিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলাঞ্জনা গুপ্ত যেমন তাতে সুর মিলিয়ে বললেন, ‘‘সাম্য সব ক্ষেত্রেই চাই। তবে সমান শিক্ষা যে সকলের অধিকার, সেটা জানানো প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই আজ এসেছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জাতীয় স্তরের আয়োজকদের তরফে শবনম হশমি দিল্লি থেকে ফোনে জানালেন, এ দিন শ’দেড়েক মিছিল হয়েছে গোটা দেশের নানা প্রান্তে। শুধু শহর নয়, বিভিন্ন গ্রামেও একজোট হয়ে পা মিলিয়েছেন মেয়েরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুধু রাজনৈতিক দলই রাজনৈতিক বার্তা দেবে, এমন তো নয়। যাঁরা ভোট দেন, তাঁদের কথা বলবেন কারা? সাধারণ মেয়েদের দাবি এবং বক্তব্য তো জানাতেই হত!’’ রামলীলা ময়দান থেকে যাত্রা শুরুর আগে সেই দাবিকে সমর্থন জানাতে উপস্থিত হলেন অপর্ণা সেন, সোহাগ সেনও।
নিজেদের বক্তব্যটুকু সমাজের নানা স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে বলেই আয়োজকদের তরফে জানালেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়, অঞ্চিতা ঘটক, অনুরাধা কপূর, দোলন গঙ্গোপাধ্যায়েরা। দোলন বললেন, ‘‘আজ প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন। শহরের বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন। এত জনে মিলে স্লোগান তুললে তার কিছু প্রভাব তো পড়বেই।’’ প্রসঙ্গত সেই প্রভাবের আশা নিয়েই এ দিনের মিছিলে পা মিলিয়েছেন সঙ্গীত গবেষক ও গায়িকা মৌসুমী ভৌমিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত অল্পবয়সিরা এসেছেন, সেটা দেখেই ভাল লাগছে। একটা মিছিলে দিন হয়তো বদলে দেওয়া যায় না, তবে আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।’’ কলেজপড়ুয়া থেকে নানা স্তরে কাজ করা মেয়েদের তোলা সেই আওয়াজেই বারবার ঘুরে তাকাল শহরের ব্যস্ত পথ। কাজের ফাঁকে এসে কয়েক কদম পা মেলালেন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখা কেউ কেউ।
‘‘জগতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী যে অবশেষে নিজেদের একজোট করতে পারল, সেটা কিন্তু কম নয়’’— মিছিলের মাঝে ভেসে এল দুই কলেজপড়ুয়া বান্ধবীর আলোচনা। ব্যস্ত দিনের মিছিল তত ক্ষণে শিয়ালদহ ছাড়িয়ে, রাজাবাজার পেরিয়ে এগোচ্ছে শ্যামবাজারের দিকে। কখনও উঠছে ‘পথেই হবে এ পথ চেনা’ ধ্বনি, কখনও বা ‘...তবে একলা চলো রে’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy