বিপত্তি: ‘দ্য উইনার্স’-এর কর্মীদের কটূক্তি ও কামড়ে দেওয়ার ঘটনায় ধৃত ছ’জন
ইভটিজ়ারদের ধরার জন্য ঘুরছিল মহিলা পুলিশ। সাদা পোশাকের এক মহিলা পুলিশকর্মীর দিকেই ধেয়ে এল কটূক্তি। প্রতিবাদ করতে গেলে নিগৃহীত হতে হল পুলিশকেই। অভিযুক্তকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন মহিলাও। অভিযোগ, কামড়ে দেওয়া হয় দু’জন মহিলা পুলিশকর্মীকে!
শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর বন্দর থানা এলাকার মিলেনিয়াম পার্কে। অভিযোগ, সেখানে নজরদারির কাজের সময়ে এক যুবকের কটূক্তি ও অশ্লীল আচরণের মুখে পড়তে হয় কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী ‘দ্য উইনার্স’-এর এক কর্মীকে। অভিযুক্ত সেই যুবককে ধরতে গেলে, তার পরিজনেরাই বাহিনীর দুই কর্মীকে কামড়ে দেন বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য এই ঘটনায় অভিযুক্ত চার মহিলা-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে উত্তর বন্দর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম মহম্মদ মাজিদ ওরফে মুন্না, মহম্মদ আজাদ, নাসরিন বেগম, নিক্কি বানু, নিশা পারভিন এবং আফরারা খাতুন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার বিকেলে। অন্য উৎসবের দিনের মতোই শহরের বিভিন্ন পার্কে সাদা পোশাকে নজর রাখছিলেন ‘দ্য উইনার্স’-এর কর্মীরা। শুক্রবার ওই বাহিনী ছিল উত্তর বন্দর থানা এলাকার গঙ্গা সংলগ্ন মিলেনিয়াম পার্কে। পার্ক তখন ভিড়ে ঠাসা। কেউ এসেছেন যুগলে, কেউ পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে। সেই পার্কেই নজরদারি চালাচ্ছিলেন ‘দ্য উইনার্স’-এর ১২ সদস্য। যার মধ্যে তিন জন ছিলেন সাদা পোশাকে, বাকিরা উর্দিতে।
ব্যাঙ্কশাল আদালত চত্বরে এক ধৃতকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
অভিযোগ, সাদা পোশাকে থাকা তিন মহিলা পুলিশকর্মী পার্কের ভিতরে যখন ঘুরছিলেন, তখনই ওই যুবক এক মহিলা পুলিশকর্মীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। মহিলা পুলিশকর্মী ঘুরে তার প্রতিবাদ করতেই আরও নানা ধরনের অশ্লীল মন্তব্য করা হয়। শুরু হয় বচসা। এমনকি, ওই পুলিশকর্মীকে ধাক্কাও মারা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের আরও অভিযোগ, এর পরেই ওই যুবক আরও লোক ডেকে আনার হুমকি দিতে শুরু করে। যুবকের চেঁচামেচিতে ঘটনাস্থলে চলে আসেন তার পরিজনেরা। সাদা পোশাকে থাকা মহিলা পুলিশকর্মীরাও এগিয়ে যান। অভিযোগ, তখনই দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পুজোর আসরে তৃণমূল বিধায়ককে গুলি করে খুন হাঁসখালিতে, শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর
এ বার আর পুলিশকর্মীরা দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে ডেকে পাঠান ‘দ্য উইনার্স’-এর উর্দি পরা বাহিনীকে। তাঁরা এসে ওই যুবককে ধরতে গেলে, তার সঙ্গে থাকা মহিলারা চড়াও হন পুলিশের উপরে। অভিযোগ, এর পরেই দুই মহিলা পুলিশকর্মীকে কামড়ে দেন কয়েক জন মহিলা। গোলমাল বড় আকার নেয়। ঘটনাস্থল থেকে খবর যায় উত্তর বন্দর থানায়। এ দিকে, দু’পক্ষের গোলমালের মাঝেই ঘটনাস্থল থেকে মহিলা পুলিশকর্মীদের হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় মূল অভিযুক্ত।
বাকিদের ছাড়েনি ‘দ্য উইনার্স’-এর বাহিনী। বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা শম্পা গুহ বাকিদের সাহায্যে অপর দুই যুবককে ধরে ফেলেন। অন্যরা ধরেন চার মহিলাকে। অভিযোগ, ধৃত চার মহিলা অভিযুক্ত যুবকের আত্মীয়। এর পরেই বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং শম্পা গুহের অভিযোগের ভিত্তিতে ছ’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে মহিলাদের লক্ষ্য করে কটূক্তি, অভব্য আচরণ, পুলিশকে মারধর এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। শনিবার সকলকেই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে নাসরিন বেগম-সহ তিন জনের জেল হেফাজত হয়। বাকি তিন মহিলার জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে মূল অভিযুক্তের এখনও খোঁজ মেলেনি।
এ দিকে, শনিবার দুপুরে আদালতে নিয়ে আসার সময়ে আরও এক দফা নাকানি-চোবানি খেতে হয় পুলিশ অফিসারদের। আদালতের গেটের বাইরে গাড়ি থেকে অভিযুক্তদের নামিয়ে এজলাসে নিয়ে যাওয়ার সময়ে আঠেরো বছরের তরুণী আফরারা খাতুন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে সামলাতে বাকিরা ছুটে এলে আরও এক মহিলা পড়ে যান। যদিও তিনি অভিযুক্ত নন বলে জানায় পুলিশ। আদালতে আসা পরিজনেদের ডেকে শেষে অভিযুক্তদের তুলে নিয়ে যেতে হয়। পরে অবশ্য জামিন পেয়ে যান আফরারা।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ ভাবেই বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অভিযুক্ত মহিলারা। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের পরে সকলে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁদের কোনও সমস্যা নেই বলেই জানান চিকিৎসকেরা। এ দিকে, মূল অভিযুক্তের খোঁজে এখনও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ, গ্রেফতার হওয়া কেউ অভিযুক্ত যুবকের নাম, ঠিকানা জানেন না বলেই পুলিশের কাছে দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy