অসহায়: ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়েকে কোলে নিয়েই পথ চলা দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা রাজু সর্দারের। সোমবার, পার্ক সার্কাস স্টেশনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গত এক সপ্তাহ ধরে হাজরার হাসপাতালে ভর্তি ছিল দশ বছরের মেয়ে। সোমবার সকালেই ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়েকে ছুটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল। তাই ও বাড়ি ফিরবে বলে একটু খুশিই ছিলাম। দুপুরে মেয়েকে নিতে ওর মা-ও এসেছিলেন। মা-মেয়েকে নিয়ে যখন বাড়ি ফেরার অটোয় উঠি, তখনই কেউ এক জন বললেন যে, রেল অবরোধ হয়েছে।
দক্ষিণ বারাসতের বাড়িতে পৌঁছতে ট্রেন ছাড়া উপায় নেই। তাই সাত-পাঁচ ভেবে মেয়ে-বৌকে নিয়ে পার্ক সার্কাস স্টেশনে চলে এসেছিলাম। তখন প্রায় বিকেল ৩টে। পৌঁছে দেখি, কোথাও দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। চার দিকে শুধু কালো কালো মাথা। কেউ রেললাইনে বসে, কেউ আবার হেঁটে হেঁটেই শিয়ালদহ, বালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। অনেকেই স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে গেলেন। ঘণ্টা দুয়েক ধরে স্টেশনের এক কোণে অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে যে, অবরোধ হয়েছে, ট্রেন বন্ধ। কখন ট্রেন চলবে, কেউই জানেন না। ট্রেন চলতে শুরু করলেও অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কী ভাবে ট্রেনে উঠব, তা-ও বুঝতে পারছি না। এমনিতেই মেয়ের উপর দিয়ে কয়েক মাস ধরে ঝড় বইছে। আজকের এই ভোগান্তিতে ও আরও ভেঙে পড়েছে। প্রতিবাদের নামে রেল অবরোধ কবে যে বন্ধ হবে!
দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে নেমে বাড়ি পৌঁছতে আরও কয়েক কিলোমিটার অটোয় যেতে হয়। পার্ক সার্কাস থেকে ট্রেনে লাগে প্রায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট, তার পরে অটোয় আধ ঘণ্টা। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ট্যাক্সির কথাও ভেবেছিলাম। ট্যাক্সিচালক তিন হাজার টাকা হাঁকলেন! রিকশা চালাই, সংসারে এমনিতেই অভাব। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়েই সব টাকা শেষ। ট্যাক্সি করে যে ওকে বাড়ি নিয়ে যাব, সেই সামর্থ্য নেই। সারা দিন খাওয়াদাওয়াও জোটেনি। জানি না, অসুস্থ মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যেতে আর কত হয়রানি সইতে হবে। একটা মেয়ের খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ হওয়া উচিত, কিন্তু তা মানুষের ভোগান্তি করে কেন?
(রেলযাত্রী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy