ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে অঙ্গীকার দাশগুপ্তের মা কস্তুরী দাশগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।
যে কলকাতা শহর এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে উত্তাল, যে শহরে নাগরিক সমাজ প্রায় রোজই পথে নেমে আন্দোলনে শামিল হচ্ছে, সেই শহরেই নিজেদের ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন মা-বাবা। কারণ, কিশোর ছেলের মৃত্যু সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের উত্তর এখনও পাননি তাঁরা। প্রায় দু’মাস আগে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ওই কিশোরের। তার মায়ের অভিযোগ, ‘‘প্রায় দু’মাস কেটে গেল। অথচ, আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার এখনও পেলাম না। অনেক প্রশ্নের উত্তরই তো পাইনি।’’
গত ১৮ জুলাই সল্টলেকের সিএ স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, দমদম থানা এলাকার মল রোডের বাসিন্দা অঙ্গীকার দাশগুপ্ত (১৬) স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। হলদিরাম বাস স্টপে নামার সময়ে বাস থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। অঙ্গীকারের মা কস্তুরী দাশগুপ্ত এবং বাবা অঞ্জন দাশগুপ্তের অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের জানিয়েছেন, বারাসতমুখী এল-২৩৪ এবং ৭৯ডি, এই দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষি চলছিল। বাস স্টপের কাছে এসে জোরে ব্রেক কষায় চলন্ত এল-২৩৪ থেকে পড়ে যায় অঙ্গীকার। গুরুতর জখম হয় সে। প্রথমে কাছাকাছি একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার পরে নেওয়া হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে অঙ্গীকারের মা-বাবা বারাসত মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
মা কস্তুরীর দাবি, ছেলের মৃত্যু ঘিরে প্রচুর ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। তিনি রাজারহাটের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। বাবা হুগলির একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। রাজারহাটের ওই স্কুলে বসেই কস্তুরী বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনেছি। আমাদের প্রথম প্রশ্ন, ছেলের গলায় তো স্কুলের পরিচয়পত্র ছিল। তাতে আমাদের ফোন নম্বর লেখা ছিল। তা হলে ঘটনার পরেই আমাদের পুলিশের তরফে ফোন করা হয়নি কেন?’’ কস্তুরীর দ্বিতীয় প্রশ্ন, তাঁদের না জানিয়েই কেন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেলেকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হল? কস্তুরীর দাবি, তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁদের ছেলেকে যিনি বারাসতের হাসপাতালে নিয়ে যান, তিনি এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার গোত্রের কর্মী। তাঁর প্রশ্ন, কেন বারাসতের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ছেলের সঙ্গে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না? ছেলের মৃত্যুর প্রকৃত সময়টাও তাঁরা জানতে পারেননি বলে মায়ের দাবি।
কস্তুরীর অভিযোগ, ‘‘আমরা ছেলের দুর্ঘটনার বিষয়ে এই সব প্রশ্ন করতেই আমার বাবা ও স্বামীর উপরে চড়াও হয় বারাসত থানার পুলিশ। আমার বাবাকে ও স্বামীকে ঘুষি মেরে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। আমাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যিনি মারধর করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা পুলিশ নিয়েছে?’’ ওই সময়ে পুলিশও অঙ্গীকারের পরিবারের বিরুদ্ধে হেনস্থার পাল্টা অভিযোগ করেছিল। কস্তুরীর আরও প্রশ্ন, ‘‘এত দিন কেটে যাওয়ার পরেও কেন এখনও চার্জশিট তৈরি হল না? কেন জামিন-অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়নি বাসচালক ও কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে?’’ কস্তুরী জানান, গত বুধবার বিচারের দাবিতে সল্টলেকে তাঁর ছেলের স্কুল থেকে পিএনবি পর্যন্ত মিছিল করে গিয়ে ফের স্কুলে ফিরে আসেন তাঁরা। সেই মিছিলে ছেলের বন্ধু, আত্মীয় পরিজন-সহ বহু সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছিলেন।
যদিও ডিসি (বিমানবন্দর) ঐশ্বর্য সাগর বলেন, ‘‘মা-বাবার অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও গাফিলতি হয়নি। পুলিশ প্রথমে ওই ছেলেটিকে উদ্ধার করে। পুলিশের সঙ্গে এক জন ভলান্টিয়ার ট্র্যাফিক মার্শাল ছেলেটিকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই বেসরকারি হাসপাতাল ছেলেটিকে মৃত ঘোষণা করায় তাকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ ঐশ্বর্য আরও বলেন, ‘‘ওই বাসের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের অ্যাক্সিডেন্ট মনিটরিং সেল দেখছে। চার্জশিট তৈরি হচ্ছে। আইন অনুযায়ী সব কিছু করা হচ্ছে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা মারধরের অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের যা বক্তব্য, তা অনেক আগেই জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy