স্কুলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিলেন পরিদর্শক। —নিজস্ব চিত্র।
আচমকা স্কুলে হাজির হয়েছিলেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। দেখলেন, টিচার ইন চার্জ-সহ কোনও স্থায়ী শিক্ষকই স্কুলে উপস্থিত নেই। স্কুল চালাচ্ছেন নকল (প্রক্সি) শিক্ষকেরা। দু’তিন হাজার টাকা বেতনে দিনের পর দিন নকল শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালানোর অভিযোগের হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে স্কুলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। শো-কজ করেছেন তিন শিক্ষককেও।
বুধবার এমনই ঘটনা ঘটেছে মধ্য হাওড়ার রাজবল্লভ সাহা লেনের জ্ঞানমন্দির হিন্দি জুনিয়র হাইস্কুলে। হাওড়া জেলা পরিদর্শক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন ধরেই জেলা শিক্ষা দফতরে অভিযোগ আসছিল, ওই স্কুলটিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিযুক্ত শিক্ষকেরা নিয়মিত ভাবে স্কুলে আসেন না। তার বদলে সেখানে কয়েক জন নকল শিক্ষককে দিয়েই স্কুল চালাচ্ছেন তাঁরা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে পডু়য়াদের ক্লাস নেন ওই নকল শিক্ষকেরাই।
বিষয়টি জানেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল। আমিই জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে স্কুলটিতে ঘুরে এসে রিপোর্ট দিতে বলেছিলাম। আর এমন স্কুল রয়েছে কি না, তারও রিপোর্ট দিতে বলেছি।’’
সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। নকল শিক্ষক তো বটেই, বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শকের অভিজ্ঞতা বলছে জেলার কিছু স্কুলে ক্লাসের সময়ে অন্যত্র সব্জি বেচছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা, এমন অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে। এমনকী ক্লাসের সময়ে স্কুলের পাশের পুকুরের জল থেকে মাথা তুলে পরিদর্শককে হাজিরা দিচ্ছেন শিক্ষক, ঘটেছে তেমন ঘটনাও। এ দিনের অভিযোগ সেই ধারাবাহিকতারই সংযোজন, বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ দিন হাওড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপসকুমার বিশ্বাস জানান, কিছু দিন ধরে নকল শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে এ দিন তিনি নিজেই দফতরের কয়েক জনকে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই স্কুলে চলে যান। ততক্ষণে সেখানে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও স্কুলের স্থায়ী শিক্ষকদের দেখা মেলেনি।
তাপসবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে গিয়ে দেখি আসল শিক্ষকেরা নেই। নকল শিক্ষকেরা একের পর এক ক্লাস নিচ্ছেন। এটা দেখেই আমি অফিসঘরে তালা লাগিয়ে দিই।’’ তাপসবাবু জানান, পর্ষদের আইনের তোয়াক্কা না করে এই ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে স্কুলের টিচার ইন চার্জ প্রমোদকুমার সিংহ এবং অন্য দুই শিক্ষক মহেন্দ্রকুমার সিংহ, ও রমেশকুমার ঠাকুরকে শো-কজ করা হয়েছে। উপযুক্ত ব্যাখ্যা না পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি স্কুলের পঠন পাঠন যাতে নিয়মিত চলে তা-ও দেখা হবে বলে তাপসবাবু জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাত-আট আগে ওই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল পাঁচ জন। কয়েক বছর আগে দু’জন অবসর নেওয়ায় বতর্মানে শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। অথচ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা এখন প্রায় একশো।
স্কুলের অফিসে তালা লাগানোর ঘটনা শুনে অভিযুক্ত এক শিক্ষক রমেশকুমার ঠাকুর বলেন, ‘‘শিক্ষক চেয়ে পর্ষদের অফিসে বারবার দরবার করেছি। কিন্তু তাঁরা শিক্ষক দেননি। তাই আমাদের বেতন থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেতন দিয়ে বাইরের শিক্ষক রেখেছি। তা না হলে স্কুলটাই উঠে যেত।’’
কিন্তু তাঁরা নিজেরা স্কুলে থাকেন না কেন?
ওই শিক্ষকের দাবি, তাঁরা নিয়মিত স্কুলে ক্লাস নেন। এ দিনই তিন জনই বাইরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তখনই জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক এসে পড়ায় সব গোলমাল হয়ে গিয়েছে। টিচার ইন চার্জ প্রমোদবাবুকে বারবার যোগাযোগ করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy