বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন ১৯৯৬ সালে। কিন্তু তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে ২০১২ সালের অগস্টে করা এক চুক্তিপত্রে! কী ভাবে সম্ভব? আপাতত এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন বিধাননগর পুরসভার ছ’নম্বর বরো অফিসের আধিকারিকেরা।
ঘটনাটা কী?
সম্প্রতি আইএ ২৫ ঠিকানায় অবস্থিত একটি ওষুধ বিপণি লাইসেন্স নবীকরণের জন্য ছ’নম্বর বরো অফিসে আবেদন জমা করে। আবেদনের সঙ্গে ভাড়ার চুক্তিপত্রের যে প্রতিলিপি জমা করা হয়েছে তা নিয়েই বেধেছে গোলমাল। পুরসভা সূত্রের খবর, নথি অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৫ অগস্ট ওষুধ বিপণি সংস্থার সঙ্গে লিজ চুক্তি করেছেন নারায়ণ মিত্র। অথচ কলকাতা পুরসভার ডেথ সার্টিফিকেট বলছে, ১৯৯৬ সালে নারায়ণবাবুর মৃত্যু হয়েছে! শুধু তা-ই নয়, ২০১২ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রে নারায়ণ মিত্রের বয়সের উল্লেখ রয়েছে ৬৫ বছর। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, নারায়ণবাবুর মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৭২ বছর!
পুরসভার এক আধিকারিকের অভিযোগ, কর ফাঁকি দিতেই সম্ভবত এই চুক্তিপত্রের গরমিল ঘটেছে। তিনি জানান, আইএ ২৫-এর ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। সল্টলেকে এ ধরনের নজির আরও রয়েছে। পুরসভার অন্য এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেবি ব্লকে এক জনেরই কর বাকি রয়েছে ৮৬ লক্ষ টাকা। আইএ ব্লকের বাসিন্দা এক জন জিএসটি নিয়ে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা রোজগার করছেন। অথচ পুরসভাকে কর দিচ্ছেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা! সিডি ব্লকের একটি রেস্তরাঁর কাগজপত্র নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: অর্থ দফতরের নির্দেশ নিয়ে পাঁচ খণ্ডের বই
ওই চুক্তিপত্রে মৃত বৃদ্ধের সই করা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ যে দাবি করেছেন, তাতে ধন্দ আরও বেড়েছে। নারায়ণবাবুর ছেলে পিনাকী মিত্রের দাবি, ‘‘ওই চুক্তিপত্রে বাবার সই জাল করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি কী ভাবে সই করলেন সেটা তো আমারও প্রশ্ন!’’ পিনাকী জানান, বাবার মৃত্যুর পরে ২০০০ সালে আর কে ঝুনঝুনওয়ালা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল। তাতে পিনাকী এবং তাঁর মায়ের সই রয়েছে। ২০১২ সালে আর কে ঝুনঝুনওয়ালার কাছ থেকে একটি ওষুধ বিপণি সংস্থা দোকানটি ভাড়া নেন। এ নিয়ে আর কে ঝুনঝুনওয়ালার ছেলে সুনীল ঝুনঝুনওয়ালাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
‘‘নারায়ণ মিত্রের সঙ্গে ওষুধ বিপণি সংস্থার তো কোনও চুক্তিই হয়নি! চুক্তিপত্রে নাম আর ঠিকানা বদলে দেওয়া হয়েছে। আমার বাবার সেই সময়ে বয়স ছিল ৬৫ বছর। সেটাই চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে!’’
ওষুধ বিপণি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের তরফে জানানো হয়, হেড অফিস থেকে কাগজপত্র আনিয়ে ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কী ভাবে এমন হল সেটা তারা বুঝতে পারছে না।’’
তবে ট্রেড লাইসেন্স পেতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কারণ হিসাবে ভিন্ন মতও রয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের যুক্তি, নতুন ট্রেড লাইসেন্স বা লাইসেন্সের নবীকরণে দীর্ঘসূত্রতার জন্য এ ধরনের প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। যদিও সেই যুক্তি উড়িয়ে পুরসভার কর মূল্যায়ন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সল্টলেকে ট্রেড লাইসেন্স পেতে কোনও সমস্যা নেই। বরং কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই এ ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। এই প্রবণতা রুখতে পুরসভা দ্রুত সার্বিক নীতি তৈরি করবে।’’
ছ’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মিনু দাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ ধরনের ব্যক্তির জন্য অন্যেরা ভুগছেন। করের টাকা না পেলে পুরসভা উন্নয়নের কাজ করবে কী ভাবে? সল্টলেকে অনেকে আছেন, যাঁরা বাণিজ্যিক স্বার্থে বাড়ি ব্যবহার করলেও বসতবাড়ির হিসাবে কর দিচ্ছেন। এগুলো আমরা আর বরদাস্ত করব না। দীপাবলির পরে বিষয়টি পুরসভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে। তখন আইএ ২৫-এর চুক্তিপত্রের রহস্য উদ্ঘাটনে সব পক্ষকে ডাকা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy