‘মার্ক ইওরসেল্ফ সেফ’।
হ্যাঁ, এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে দিল বৃহস্পতিবারের কলকাতা। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ গণেশ টকিজের কাছে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ উড়ালপুল। প্রথম দর্শনেই অন্তত ১০ জনের মৃত্যু এবং চাপা পড়া শতাধিক মানুষ। টিভি-ফোন-মেসেজ-সোশ্যাল সাইটে বিপদবার্তা। হোয়্যাট্সঅ্যাপ-ফেসবুক-ট্যুইটারে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়া দুর্ঘটনার ছবি, স্টেটাস, সাহায্য প্রার্থনা। যার জেরে সন্ধ্যা থেকে ঘটনাস্থল, আশপাশের এলাকায় ‘অবস্থান করা’ মানুষকে নিজেদের নিরাপদে থাকার বার্তা দিতে বলল ফেসবুক। সম্ভবত ভারতে কোনও দুর্ঘটনায় এই প্রথম।
শুরুটা হয়েছিল নেপালের ভূমিকম্পে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘটনাস্থল বা আশপাশে মানুষ নিরাপদে আছেন কি না, তা বন্ধুদের জানানোর সুযোগ করে দেয় ফেসবুক— সংক্ষেপে ঘটনার বিবরণ, সঙ্গে দু’টি বোতাম। একটি ‘মার্ক ইওরসেল্ফ সেফ’, অন্যটি ‘চেক অন ফ্রেন্ডস’। অর্থাৎ নিজে নিরাপদে থাকা ও বন্ধুরাও ঠিক আছেন কি না, খবর আদানপ্রদানের পরিষেবা। তার পর থেকে সারা বিশ্বের মতো ভারতেও বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্প, বন্যা, ধস, হড়পা বানের মতো ঘটনায় আতঙ্কিত আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুদের খবর দেওয়া গিয়েছে ফেসবুকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাইরে জঙ্গি হামলা ছাড়া তেমন কোনও ঘটনায় ভারতে এ পর্যন্ত ‘মার্কড সেফ’ বোতাম ব্যবহারের পরামর্শ দেননি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
দিলেন এ দিন সন্ধ্যায়। কলকাতার আতঙ্ক, হাহাকার ততক্ষণে টিভির পর্দা, ইন্টারনেট বেয়ে দেশের আনাচে-কানাচে, বাড়ি-অফিস-স্কুল কলেজে, রাস্তাঘাট-যানবাহনে, আলোচনা-আড্ডায়। ছড়িয়ে গিয়েছে পৃথিবীর সব প্রান্তে। টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে মানুষ দিনভর খুঁজে ফিরেছেন মৃত-আহত-আটকে পড়ার তালিকায় চেনা কেউ নেই তো! সন্ধ্যা সাতটার পরে সেই আশ্বাসের ব্যবস্থাটাই জুগিয়ে দিল ফেসবুক। এবং হুড়মুড়িয়ে বাড়তে লাগল ‘মার্কড সেফ’-এর সংখ্যা। বার্তা দিলেন সাধারণ মানুষ থেকে সেলিব্রিটি সকলেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন দূরের আত্মীয়-বন্ধুরা।
কেউ কেউ অবশ্য এই আশ্বাস নিয়ে খানিকটা ব্যাঙ্গাত্মক। ফেসবুকেই স্টেটাস দিয়ে তাঁরা বলছেন, সকলেই তো আর দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে নেই। অথচ তাঁরাও নিজেদের ‘সেফ’ জানাতে ব্যস্ত। যেমনটা হয়েছিল নেপালের ভূমিকম্পে, চেন্নাইয়ের বন্যায় বা প্যারিসের হামলায়— কলকাতায় বসে মানুষ জানিয়েছিলেন তাঁরা নিরাপদ। তাঁদের হাসাহাসিতে বিরক্ত অন্য দলটা অবশ্য বলছেন, কলকাতায় এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলে বাড়ির বাইরে থাকা মানুষদের জন্য পরিবারের বা শহরের বাইরে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের দুশ্চিন্তা তো হতেই পারে। ফেসবুকে তাঁদের আশ্বস্ত করা গেলে ক্ষতি কী! বরং কাছের মানুষকে নিজের নিরাপদ থাকার বার্তা দেওয়া গেলে নিজেরাও তো অনেকখানি নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে— বলছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy