Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দূষণ কাটাতে শহরে ফিরুক ট্রাম, উঠল দাবি

কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে চর্চা এই প্রথম নয়। বারবারই বায়ুদূষণের নিরিখে দেশের মহানগরীর মধ্যে তালিকার উপরে ঠাঁই পেয়েছে কলকাতা। গত শীতের মরসুমে দিল্লিকে হারিয়ে কলকাতা বহু দিন বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল।

পরিবেশবান্ধব: হাতে গোনা রুটে টিকে রয়েছে ট্রাম। শহরে দূষণ কমাতে বেশি করে ট্রাম চালানোর দাবি তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পরিবেশবান্ধব: হাতে গোনা রুটে টিকে রয়েছে ট্রাম। শহরে দূষণ কমাতে বেশি করে ট্রাম চালানোর দাবি তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

কলকাতা শহরে ‘ট‌ং টং’ শব্দে ছুটে যাওয়া ট্রাম কার্যত নস্ট্যালজিয়ার চেহারা নিচ্ছে। অথচ মহানগরের বায়ুতে বিষের পরিমাণ কমাতে কার্যত হারাতে বসা সেই ট্রামের পুনরুজ্জীবনের দাবি তুলছেন পরিবেশকর্মীরা। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতায় পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বললেন, ট্রামকে শুধু ঐতিহ্যের শরিক করে রাখলেই হবে না। গণপরিবহণকে চাঙ্গা করতে এর টিকে থাকা জরুরি।

কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে চর্চা এই প্রথম নয়। বারবারই বায়ুদূষণের নিরিখে দেশের মহানগরীর মধ্যে তালিকার উপরে ঠাঁই পেয়েছে কলকাতা। গত শীতের মরসুমে দিল্লিকে হারিয়ে কলকাতা বহু দিন বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল। পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ) অনুমিতা রায়চৌধুরীর মতে, এই দূষণের অনেকটাই গাড়ির ধোঁয়া থেকে। এ দিন অনুষ্ঠানে ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘‘দূষিত ধোঁয়ার অনেকটাইন ব্যক্তিগত যানবাহনের ধোঁয়া থেকে। এই দূষণ রুখতে বিদ্যুৎচালিত ট্রামের মতো গণপরিবহণ ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন জরুরি।’’

তবে বর্তমানে ট্রাম লাইনে কংক্রিটের ঢালাই করার পরে ট্রাম চলার সময় কর্কশ শব্দ বেড়ে গিয়েছে। বছর কয়েক আগে সেই শব্দ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন খোদ কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘সেই শব্দ যাতে না-হয় তার প্রযুক্তি রয়েছে।’’

কলকাতার পরিবেশ ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ট্রামের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন ইতিহাসের শিক্ষক-গবেষক সিদ্ধার্থ গুহরায়। তিনি জানান, ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথম স্টিমচালিত ট্রাম চালু হয়। কিন্তু সেই ধোঁয়া কলকাতার ক্ষতি করছে বলে সরব হন তৎকালীন বাঙালি সমাজ সংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ এক দল নাগরিক। তার বদলে ১৮৮০ সালে ঘোড়ায় টানা ট্রাম শুরু হয়। কিন্তু বিরূপ পরিবেশে ট্রাম টানতে গিয়ে অস্ট্রেলীয় ওয়েলার ঘোড়ারা দ্রুত মারা যাচ্ছে, বলে অভিযোগ তোলে পশুক্লেশ নিবারণী সংস্থা। সেই আপত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯০৩ সালে বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালু হয়। বাংলার ইতিহাসে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গা রোখা বা শ্রমিক আন্দোলনে ট্রাম ও তার কর্মীরা ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে রয়েছেন। তাই ট্রামকে বাঁচিয়ে সেই ইতিহাস রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন গবেষকেরাও।

ট্রামের পুনরুজ্জীবন নিয়ে আন্দোলনরত নাগরিকদের মতে, পুনরুজ্জীবন তো দূর অস্ত, উল্টে ট্রামকে ধীরে ধীরে কবরে পাঠানো হচ্ছে। ওই আন্দোলনের অন্যতম নেতা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ট্রাম নিয়ে সরকারি সদিচ্ছার অভাব প্রকট হতে থাকে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ট্রাম ডিপোর জমি লিজ দেওয়া শুরু হয়।’’

ট্রাম সংস্থার কর্মী সংগঠনের নেতা সুবীর বসু জানান, বর্তমানে ৭টি রুটে দৈনিক ৩২টি ট্রাম রয়েছে। অথচ ট্রাম কোম্পানির ভাঁড়ারে রয়েছে ২৫২টি ট্রাম। সংস্থার কর্মীরাই জানিয়েছেন, বন‌্ধের দিনে ৫০-৫২টি ট্রাম চালানো হয়। পরিবহণ দফতরের খবর, দফতরের একাধিক শীর্ষকর্তা ট্রামের পুনরুজ্জীবনের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকারি ভাবে তা ঘোষণা করা হয় না। সম্প্রতি ধর্মতলায় একটি এক কামরার ট্রাম উদ্বোধনে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ট্রামকে রাখা হবে। তা হলে কি দার্জিলিঙের টয় ট্রেনের মতোই তকমা পাবে কলকাতার ট্রাম?

ট্রাম নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতৃত্বের দাবি, তেমন কোনও উদ্যোগ সরকারের তরফে এখনও নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Environmentalist Tram Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE