উদয়নারায়ণপুরের সরকার অনুমোদিত হোমে জায়গা পেলেন ছিয়াত্তর বছরের সবিতা মুখোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।
হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে উদয়নারায়ণপুরের সরকার অনুমোদিত হোমে জায়গা পেলেন ছিয়াত্তর বছরের সবিতা মুখোপাধ্যায়।
সবিতা মুখোপাধ্যায়ের আদত বাড়ি হাওড়ায়। হাওড়ার বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজের কলা বিভাগের সেই স্নাতকের নিজের ঘর ছিল, সন্তান ছিল।
সবিতাদেবীর বিয়ে হয়েছিল উচ্চপদে কর্মরত এক ব্যক্তির সঙ্গে। বিয়ের সূত্রে তিনি বহরমপুরে চলে যান। সেখানেই চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার চলছিল। ঘটনাচক্রে এক দিন খুন হয়ে যান তাঁর স্বামী।
আরও পড়ুন: স্নাতক বৃদ্ধা ভিক্ষা করেন হাওড়া স্টেশনে, আগলে রেখেছেন হকার ‘ছেলে’রা
বহরমপুর থেকে ফিরে আসেন সবিতা। কখনও স্টেশন চত্বরের শৌচালয়ের দেখাশোনা, আবার কখনও নিম দাঁতন বিক্রি করে মানুষ করার চেষ্টা করেন চার ছেলেমেয়েকে। এরই মধ্যে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। কোনওমতে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেন মেয়েকে। অথচ গুয়াহাটিতে বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর তিনি আর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি বলে সবিতাদেবী জানিয়েছেন। প্ল্যাটফর্মে ঠাঁই হয় তাঁর।
নিজের ছেলেমেয়েরা না দেখলেও প্ল্যাটফর্মের হকার, ছোট ব্যবসায়ীরাই মায়ের মতো আগলে রাখতেন ওই বৃদ্ধাকে। সোমবার ওই বৃদ্ধার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই রেলপুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উদয়নারায়ণপুরে একটি হোমে পাঠায়। হাওড়া রেলপুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের সহায়সম্বলহীন মহিলাদের খোঁজ পেলে সঙ্গে সঙ্গে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। ওই মহিলার মেয়ের ফোন নম্বর না থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’’
আরও পড়ুন: প্রেমিকার আহ্লাদ মেটাতে শিক্ষকের বাড়ি থেকে ১৬ ভরির গয়না হাতাল
সোমবার বৃদ্ধাকে হোমে নিয়ে যাওয়ার সময় প্ল্যাটফর্মের সেই হকার ছেলেদের চোখ বেয়ে নামে জলের ধারা। তাঁদের এক জন বলেন, “আমাদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মা হোমে যদি ভাল থাকেন সেই ভেবেই আমরা খুশি হওয়ার চেষ্টা করছি।” তাঁদের ছেড়ে যেতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে যায় সবিতাদেবীরও। তবে, প্ল্যাটফর্মে তাঁকে আগলে রাখা ছেলেরা কথা দিয়েছেন, তাঁরা মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসবেন তাঁদের মাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy