Advertisement
E-Paper

Pavlov Mental Hospital: অতিমারিতে পাভলভের অন্দরে শান্ত, দৃঢ় দুর্গার বোধন

ঠিক সেই ভাবেই ব্লক প্রিন্টের কাপড়ের গায়ে বসেছে স্বতঃস্ফূর্ত রেখার টান! অশোক নন্দী মায়ের মুখের আদলটা ফুটিয়ে তোলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩০
Share
Save

খেলাচ্ছলে ব্লক প্রিন্টের কাপড়ে প্যাস্টেল রঙের আঁকিবুকি চলছিল অনেক দিনই! তখনই দানা বাঁধে ভাবনাটা। আচ্ছা, এ ভাবেও তো ফুটে উঠতে পারে মনের দুর্গা। ব্যস, এটুকুই উস্কে দিয়েছে লাগামছাড়া কল্পনা! পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ঘেরাটোপে শুক্রবার, দেবীপক্ষে এক আশ্চর্য বোধন দেখা গেল।

“আসলে পুজোর থিম-শিল্পীদের মতো পুজো এলেই আজকাল পাভলভের আবাসিকদের মনেও একটা ঝড় বয় দুগ্গাঠাকুরের জন্য! এই সব শিল্পের কাজ ছাড়া ওঁরা ছটফট করেন”— বলছিলেন মানসিক রোগীদের ক্ষমতায়নের শরিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী শুক্লা দাস বড়ুয়া। তিনি দেখেছেন, মানসিক হাসপাতালে বছরে পর বছর পড়ে থাকা আবাসিকেরা শিল্পের সামনে সংহত হয়ে, কেমন অন্য মানুষ হয়ে ওঠেন!

ঠিক সেই ভাবেই ব্লক প্রিন্টের কাপড়ের গায়ে বসেছে স্বতঃস্ফূর্ত রেখার টান! অশোক নন্দী মায়ের মুখের আদলটা ফুটিয়ে তোলেন। পাশে দ্রুত দশভুজার হাতগুলো বসাতে থাকেন তপন দাস, সিদ্ধার্থশঙ্কর ঘোষেরা। এ ভাবেই হইহই করে একযোগে দুর্গার পদ্ম, ত্রিশূল, কাপড়ের নকশা ফুটিয়ে তোলা। আর একটা পুজো এসে গেল! এ বছরও মায়ের কাছে ফেরা হল না পাভলভের শিল্পচর্চার অপরিহার্য মুখ টুকাই সাধুখাঁর। কিন্তু মা দুগ্গার
চোখ তিনিই ফুটিয়ে তুলেছেন। এই স্বভাব-শিল্পীদের অনেককেই একটু-আধটু ওষুধ খেতে হয়। ওষুধের প্রভাবে রং করা বা ছবি আঁকার হাতটা গোড়ায় এলোমেলো হয়ে যেত কারও কারও। এ দিন বিকেলে পাভলভের চা-ঘরে তাঁদের হাতের দুর্গার দিকে তাকিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছিলেন, হাসপাতালের বাইরের জগতে ক’জন পারবে এমন সৃষ্টি ফুটিয়ে তুলতে!

পাভলভের আবাসিকদের শিল্পচর্চার শরিক তথা বন্ধু-শিক্ষক নবেন্দু সেনগুপ্ত বলছিলেন, “এই মানুষগুলোকে মনোরোগী তকমা দিয়ে মূলস্রোতে ফেরাতে অনেকে ভয় পান। ওঁদের হিংস্র, অস্থির ভেবে
দূরে সরিয়ে রাখেন, কিন্তু মা দুগ্গার মুখটা দেখুন, কেমন শান্ত ঠাকুর হয়েছে।” নবেন্দু এক বার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আচ্ছা অসুর, সিংহ থাকবে না? জীবনের ঘা-খাওয়া শিল্পীরা দৃঢ় ভাবে ‘না’ বলেছেন! এই দুর্গায় বরং লক্ষ্মীর ছায়া! মন দিয়ে দেবীর অধিষ্ঠানের পদ্ম ফুটিয়ে তুলতে শিল্পীরা তখন মগ্ন।

তবে দেবীর ত্রিশূলটা বাদ পড়েনি। দেবীপক্ষে মায়ের আর একটি ত্রিশূলে সেজেছে হাসপাতালের চা-ঘর। নানা রকম কাপড়ে তা ফুটিয়ে তোলেন পাভলভেরই সুমিত্রা মুর্মু, আদুরি মালাকার, পম্পা গুহ, রূপা বর্ধনেরা। গত পুজোয় দুর্গা আঁকার সময়ে টুকাইদের চেতনায় হানা দিয়েছিল আঁকার ক্লাসে দেখা এডভার্ড মুঙ্কের বিখ্যাত ছবি, ‘দ্য স্ক্রিম’! ক্যানভাসে ফুটে উঠেছিল একটা ভয়-পাওয়া অসহায় চেহারাও। এ বার সেই আশঙ্কার বদলে রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্কল্প। তবে শান্ত মূর্তি দুর্গার আশপাশে কয়েকটা বোর্ডপিন খচিত সবুজ বলের আদলে করোনাভাইরাসকেও রাখা হয়েছে। উৎসব তো সময়ের প্রতিফলন বাদ দিয়ে নয়!

রাজ্যের সহ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা (মানসিক স্বাস্থ্য) দেবাশিস হালদার, যুগ্ম সচিব (স্বাস্থ্য) অমিতাভ দত্তদের হাতে সারা হল পাভলভের এই স্থাপনা শিল্পের উদ্বোধনী আসর। করোনাকালে আবাসিকদের বদ্ধ জীবনে এ-ও এক ধরনের মুক্তির শ্বাস! ২০২০-র পুজোয় ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়নি আবাসিকদের। এ বার রবিবার সেই সুযোগটুকু মিলবে। অনেক বেশি সংখ্যক বাসে শারীরিক দূরত্ব রেখে কয়েকটি বাছাই মণ্ডপে ঘোরা। তার আগে হাসপাতালের শিল্পচর্চায় মনে মনেই উৎসবের ছোঁয়া। উৎসব বা পুজোকে দেখার চিরকেলে দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা বদলও ফুটে ওঠে মানসিক হাসপাতালে বদ্ধ জীবনগুলোর চোখে। মানসিক রোগীদের অধিকার রক্ষা কর্মী রত্নাবলী রায়ের মতে, ‘‘শিল্পও এই তথাকথিত ব্রাত্য মানুষদের আত্মমর্যাদার স্মারক। শিগগিরই হয়তো বাঙালির পুজোর মূলস্রোতেও ওঁদের কাজ দেখা যাবে।’’

Durga Puja 2021 Pavlov Mental Hospital

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}