Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

দুর্গা আরাধনায় জেগে উঠেছে প্রান্তিক খুদে শিল্পীরা

আমপানের পরে সুন্দরবনে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁরা দেখেন, ছোটদের কেউ অপটু হাতে সযত্নে প্রতিমা গড়ছে, কেউ বানাচ্ছে শোলার ফুল।

সৃষ্টি: নিজেদের তৈরি প্রতিমা নিয়ে সুন্দরবনের ভাণ্ডারখালি গ্রামের খুদে শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র

সৃষ্টি: নিজেদের তৈরি প্রতিমা নিয়ে সুন্দরবনের ভাণ্ডারখালি গ্রামের খুদে শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:২৯
Share: Save:

এ শহরের সঙ্গে দেব মণ্ডলের কোনও যোগাযোগই নেই। সে কখনও দেখেনি কলকাতার অলিগলি বা রাজপথ। ফলে আলো ঝলমলে পুজোর শহর শুধুই তার কল্পনায় থমকে ছিল। প্রত্যন্ত জনপদে বেড়ে ওঠা ১১ বছরের সেই কিশোর দেবের তৈরি দুর্গা আসছে এ শহরে। সেই দুর্গার কল্যাণেই পুজোর কলকাতাও দর্শন হবে দেবের।

দক্ষিণ কলকাতার ওই পুজোয় চার ফুট বাই চার ফুটের দরমার মণ্ডপে পূজিত হবেন দেড় ফুটের সপরিবার দুর্গা। মণ্ডপের অন্দরসজ্জায় শোলার ফুলের ভিতরে জ্বলে উঠবে ছোট ছোট আলো। সেই ফুল, সেই মণ্ডপের কারিগরদের বয়সও মেরেকেটে ১০-১৫। লকডাউনে ত্রাণ নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘোরার সময়ে এই খুদে শিল্পীদের সন্ধান পেয়েছিলেন শহুরে এক দম্পতি, স্বগুনা এবং জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। উত্তর কলকাতায় বেড়ে উঠেছেন স্বগুনা। আর জয়দীপ ধানবাদের ছেলে। এখন দক্ষিণ কলকাতায় দুই মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার। দুর্গাপুজো এবং দেশের অন্যান্য উৎসবকে বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে বছরে একাধিক বার তাঁরা বিদেশে যান। আমন্ত্রণ করেন বিদেশি মিডিয়া এবং পর্যটকদের। এ বার লকডাউনের শুরু থেকেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও শহরের ঘিঞ্জি বস্তিতে সাহায্য নিয়ে ছুটে গিয়েছেন, জানাচ্ছেন ওই দম্পতি। আমপানের পরে সুন্দরবনে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁরা দেখেন, ছোটদের কেউ অপটু হাতে সযত্নে প্রতিমা গড়ছে, কেউ বানাচ্ছে শোলার ফুল। আবার লকডাউনের সময়ে উত্তর কলকাতায় যৌনপল্লিতে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে তাঁরা দেখেছিলেন, সেখানে বেড়ে ওঠা ছোট বাচ্চারাই দরমার কাজ করছে!

তখনই পুজোর সময়ে ওদের হাতের কাজ ব্যবহার করার ভাবনা আসে মুখোপাধ্যায় দম্পতির। ঠিক করেন, জাঁকজমকহীন সেই পুজো হবে দক্ষিণে, চেতলার পরমহংস দেব রোডে। পুরনো বাড়ির সামনের দালানের সেই পুজোর আয়োজনে যোগ দিয়েছে স্থানীয় বস্তির বাচ্চারাও। নিজেদের পুজো বলে কথা! তাই ওদেরও আনন্দ কম নয়।

রোশনাই থেকে বহু দূরে, যাবতীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত কিশোর-কিশোরীদের প্রতিনিধি হয়ে সুন্দরবনের ভাণ্ডারখালি থেকে নিজেদের গড়া দুর্গা নিয়ে ১৭ অক্টোবর প্রথম বার শহরে আসছে দেব, পিন্টু, অরূপ। কেউ ন’বছরের, কারও বয়স বারো। ষষ্ঠ শ্রেণির দেবের কথায়, “বাবা, ঠাকুরদা মাটির ঠাকুর বানায়। আমি সেই দেখেই শিখছি। তবে এই প্রথম নিজেরা মূর্তি বানিয়েছি।” মাটির তাল নিয়ে খেলতে খেলতে ছোট্ট আঙুলগুলো অজান্তেই কারিগরিতে দক্ষ হয়ে উঠেছে। যার পুরস্কার হিসেবে এই শহর দেখার সুযোগ মিলবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের সরবেড়িয়া গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সহেলি হালদার। গ্রামের অন্যদের দেখেই সহেলিরাও শোলার ফুল তৈরির কাজ শুরু করেছিল। সহেলি বলে, “হাত খরচ তুলতে আর সময় কাটাতে ফুল তৈরি শুরু করেছিলাম। সেই শেখাটাই এ বার কাজে লাগছে জেনে খুব আনন্দ হচ্ছে। কাকিমার সঙ্গে পঞ্চমীতে কলকাতায় যাব।”

আর স্বগুনার আবেদন, “এ বারের পুজো হোক মানবতার পুজো। শহরের সঙ্গে গ্রামকে মিশিয়ে দেওয়ার পুজো। ভয়ঙ্কর এই সময়ে প্রান্তিক মানুষগুলোর আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পুজো।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy