আড়াল: রোদ থেকে বাঁচতে ওড়নায় নিজেকে ঢেকে পথ চলা । মঙ্গলবার, নিউ মার্কেটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বৈশাখের আগেই ৪০ ছুঁই-ছুঁই শহরের তাপমাত্রার পারদ। চৈত্রের শেষ লগ্নের তীব্র গরমে কার্যত বাইরে বেরোনোই দায়! এ দিকে, একটানা চড়া গরম বাড়াচ্ছে ‘সান স্ট্রোক’-এর ঝুঁকিও। তাপমাত্রা বাড়তেই হাসপাতালে হাসপাতালে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীরও দেখা মিলছে। ‘সান স্ট্রোক’-এর ঝুঁকি এড়াতে একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সতর্ক থাকার কথাও বলছেন চিকিৎসকেরা।
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। শেষ বার বৃষ্টি হয়েছিল ১০-১১ দিন আগে। এই দহনজ্বালা থেকে মুক্তি কবে, আপাতত উত্তর নেই সেই প্রশ্নেরও। বরং আগামী কয়েক দিনে রোদের এই প্রখর তেজ বজায় থাকবে বলেই জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরেরবেশ কিছু অংশে লোডশোডিং হতে থাকায় যন্ত্রণা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ। এ দিকে, শহরে গত কয়েক দিনের তাপমাত্রা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
তাঁদের পরামর্শ, অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে মূলত বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরোনোই শ্রেয়। যদি কাজের প্রয়োজনে বেরোতেই হয়, সে ক্ষেত্রে পোশাক থেকে শুরু করে খাবার, বেশি পরিমাণে জল খাওয়ার উপরে বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও বলছেন তাঁরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে গরমে অসুস্থ হয়ে রোগীরা আসছেন। মূলত দুপুর এবং বিকেলের দিকে এই ধরনের রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘গরমে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে দুপুরের দিকে বাড়ির বাইরে না বেরোনোই ভাল। যদি বেরোতেই হয়, তা হলে অবশ্যই সঙ্গে রোদচশমা, ছাতা ব্যবহারের সঙ্গে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে জল পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে এই সময়ে।’’
একই রকম পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইও। তাঁর কথায়, ‘‘মস্তিকের ‘হাইপোথ্যালামাস’ নামে অংশটি আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ গরমে থাকলে হাইপোথ্যালামাস তার কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে, শরীরে ঘাম হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখনই সান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গরমে দুপুরের সময়টা সব চেয়ে বেশি ভয় থাকে। এই সময়ে যদি বাইরে বেরোনো এড়ানো যায়, তা হলে সব থেকে ভাল। তবে বাইরে বেরোলেও সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জল খাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে।’’
শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী আবার সান স্ট্রোকের পাশাপাশি টাইফয়েড, হেপাটাইটিস জাতীয় রোগ বেড়েছে বলেই জানাচ্ছেন। এই অবস্থায় বেশি জল খাওয়ার পাশাপাশি গ্লুকোজ়, নুন-চিনি মেশানো জল খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। অনির্বাণ বলেন, ‘‘গরমে ঘাম হলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। ঘামের সঙ্গে বেরোয় সোডিয়াম থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ। যা দ্রুত এক জনকে অসুস্থ করে দিতে পারে। ফলে, সতর্ক না থাকলেই বিপদ।’’ এমনকি, গরমে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন দইয়ের পাশাপাশি হালকা, কম তেল-মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সর্বজিৎ রায়।
গরমে অসুস্থতার ঝুঁকি এড়াতে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার কথাও বলছেন চিকিৎসকরা। প্রয়োজনে তাদের দিনে দু’বার স্নান করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘এই গরমে বাচ্চাদের জন্য কয়েক দিন স্কুল বন্ধ রাখলেই সব থেকে ভাল হত।কিন্তু সেটা তো অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এই সময়ে বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে হালকা জামা-কাপড় পরানো, দু’বেলা স্নান করাতে হবে। স্কুলে গিয়ে বাচ্চারা যাতে বাইরের খাবার না খায়, সে দিকেও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।’’
এ দিকে, ঊর্ধ্বমুখী পারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের বেশ কিছু অংশে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও বেড়েছে বলে অভিযোগ। গত কয়েক দিন ধরে মধ্য কলকাতার বিভিন্ন অংশে নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। যদিও অভিযোগ মানতে চায়নি সিইএসসি। সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও লোডশেডিং নেই। এমন কোনও অভিযোগের রেকর্ডও আমাদের কাছে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy