কলকাতার একটি পুজোর দূর্গাপ্রতিমা। ছবি: পিটিআই।
চলছে প্রবল দর কষাকষি!
জেলার কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য নিজেদের মণ্ডপ খুলে দিতে কলকাতার দুর্গাপুজোর কর্তাদের কেউ ১০ লক্ষ, কেউ বা ১২ লক্ষ টাকা দর হাঁকছেন। কেউ কেউ আবার ৩০-৩৫ লক্ষ টাকার কমে মণ্ডপের কিছুই দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জেলার পুজোকর্তারা পাল্টা দর দিচ্ছেন, এই দামের অর্ধেকেরও কম। কারণ, তাঁদের গোটা পুজোর বাজেটই এত টাকা নয়! ফলে কলকাতার পুজোকর্তাদের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, ন্যূনতম খরচটুকুও উঠবে না। তাই জেলায় দেওয়ার থেকে মণ্ডপ খুলে ফেলাই ভাল। অনেকে আবার নিজেদের শিল্পীর স্টুডিয়োতেই মণ্ডপের কিছু অংশ সংরক্ষণ করতে চলেছেন। আজ, শুক্রবার রেড রোডে কার্নিভালের পরে কলকাতার কোন মণ্ডপ কোন জেলায় যাবে, তা চূড়ান্ত হতে পারে।
কলকাতার পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতি বারই মহালয়ার পর থেকে মণ্ডপ চত্বরে বিভিন্ন জেলার কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোর কর্তাদের আনাগোনা শুরু হয়। তাঁরা দেখে যাওয়ার পরে পুজোর শেষে এই সময়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়। পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতার মণ্ডপ জেলায় যাওয়ার পিছনে শিল্পীদেরও বড় ভূমিকা থাকে। বহু শিল্পী পুজোকর্তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন, পুজোর শেষে নিজের মতো করে মণ্ডপ খুলে নিয়ে যাওয়ার। যেমন, সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা কিংশুক মৈত্র জানালেন, তাঁদের মণ্ডপ যাচ্ছে মেদিনীপুরের একটি পুজোয়। শিল্পীই নিয়ে যাচ্ছেন। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির মণ্ডপও একই ভাবে যাচ্ছে চন্দননগরে। কলেজ স্কোয়ারের মণ্ডপ যাচ্ছে শান্তিপুরের রাশ উৎসবে।
উত্তরের কাশী বোস লেনের নারী পাচারের উপরে তৈরি থিমের মণ্ডপ যাচ্ছে চন্দননগরের উত্তরাঞ্চলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য পুজো কমিটিই পাঠাচ্ছে। ওই পুজোর কর্তা সোমেন দত্ত বললেন, ‘‘আমরা যা দর দিয়েছিলাম, তা পাচ্ছি না। শেষে সাড়ে সাত লক্ষে কথা পাকা হয়েছে। এত ভাল মণ্ডপ অন্য কোথাও দেখানো গেলে ভালই হবে। সেটা ভেবেই আর দরাদরি করিনি।’’ তেলেঙ্গাবাগানের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের মণ্ডপও চন্দননগরে যাচ্ছে। তবে তাঁরা ১৫ লক্ষ টাকা দর দিলেও কথাবার্তা পাকা হয়নি। একই অবস্থা চোরবাগান সর্বজনীনের। সেখানকার পুজোকর্তা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মণ্ডপ তৈরিতে যা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেকের কমও পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ৩৫ লক্ষ টাকা দর দিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়!’’
দক্ষিণের বালিগঞ্জ কালচারালের কর্তা অঞ্জন উকিলও বললেন, ‘‘শিলিগুড়ি থেকে একটা প্রস্তাব এসেছে। ওঁরা সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিতে পারবেন বলছেন। আমাদের এখানে লোহাই লেগেছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার। সেই দামটুকুও না পেলে কি হয়! তবে শিল্পের কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত হয়তো খুব কমেই দিয়ে দেব। আমাদের উদ্দেশ্য, ভাল কাজ মানুষ দেখুক।’’ এই পুজোরই পাশের মণ্ডপ সমাজসেবী সঙ্ঘের কর্তা অরিজিৎ মিত্র বললেন, ‘‘চন্দননগরের একটি ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটা এগিয়েছে। ১২ লক্ষ টাকা দর দিয়েছি। কমবেশি কিছু একটা হবে। কিছু মাটির মূর্তির কারুকার্য ছিল আমাদের মণ্ডপে। তার কয়েকটি রেখে দেওয়া হবে। বহু বিশিষ্ট মানুষ আমাদের থেকে ওই মূর্তির কয়েকটি চেয়েছেন।’’ তবে, দমদম পার্ক তরুণ দল বা দমদম পার্ক ভারতচক্র, কোথাও মণ্ডপ পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এখনও। তরুণ দলের নেতাজির উপরে গবেষণার থিম রাখা হচ্ছে ওই মণ্ডপের শিল্পীর স্টুডিয়োয়। ভারতচক্রের প্রতিমা আবার সংরক্ষণ করার দিকে এগোচ্ছেন সেখানকার পুজোকর্তারা।
থিমের নিরিখে শোরগোল ফেলা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোকর্তা সজল ঘোষ বললেন, ‘‘আমাদের এমন এক মণ্ডপ, যা কোথাও নিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল। সকলে এই মণ্ডপ করতেও পারবেন না। তা ছাড়া, খুলে নিয়ে যেতে গেলেই ভেঙে যেতে পারে। রামমন্দির অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পথে ভাঙার চেয়ে নিয়ে না যাওয়া ভাল।’’
একই রকম দাবি ভিড়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের। সেখানকার পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী বললেন, ‘‘জেলার কোথাও ডিজ়নিল্যান্ড যাচ্ছে না। এই মণ্ডপ শ্রীভূমিতেই খুলে ফেলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy