রাস্তার ধার কিংবা ফুটপাথের দোকানে বসে চা খাওয়া যায়। কিন্তু জল? নৈব নৈব চ!
বাইরে গেলে সব সময় জলভর্তি জলের বোতল বয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করে না। আবার কলের জল খেতেও নারাজ। অগত্যা তেষ্টা মেটাতে ভরসা সেই বোতলবন্দি মিনারেল ওয়াটার।
আবার ধরুন কোনও রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছেন। সেখানে বসামাত্রই বেয়ারা জিজ্ঞেস করেন, “রেগুলার না মিনারেল ওয়াটার?” সাত-পাঁচ না ভেবে আপনি ঠান্ডা কিংবা স্বাভাবিক তাপমাত্রার বোতলবন্দি জলই আনতে বলেন। রেস্তরাঁয় গিয়ে এক-আধ দিন তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়াই যায়। কিন্তু ‘জীবন’ নিয়ে ছেলেখেলা করা যাবে না। কারণ, জলবাহিত রোগ। জলের মধ্যে দিয়ে নানা ধরনের ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া সহজেই শরীরে প্রবেশ করে। সব রেস্তরাঁয় বা রাস্তার ধারের দোকানে তো ওয়াটার পিউরিফায়ার থাকে না। তাই বাড়ির বাইরে গেলে চিকিৎসকেরা মিনারেল ওয়াটার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন:
সাধারণ কলের জল আর মিনারেল ওয়াটার যে এক নয়, সে তো চুমুক দিলেই বোঝা যায়। কিন্তু কেন আলাদা? কী এমন আছে এই পানীয়ে?
কলের জলের মধ্যে নানা খনিজের সঙ্গে বেশ কিছু ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, সূক্ষ্ম ধাতব কণা মিশে থাকে। এই পানীয় খেলে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। সেই জলই যখন বাড়িতে যন্ত্রের মাধ্যমে পরিস্রুত করা হয়, তখন অশুদ্ধির সঙ্গে উপকারী খনিজগুলিও ছেঁকে বেরিয়ে যায়। ফলে জলের পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়। কিন্তু মিনারেল ওয়াটারের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট এবং সালফেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খনিজ মিশে থাকে মিনারেল ওয়াটারের মধ্যে। বেশ কিছু মিনারেল ওয়াটারে আবার আয়রন, ফ্লুয়োরাইডের মতো উপাদানও থাকে।
মিনারেল ওয়াটার শরীরের জন্য ভাল?
সাধারণ জল এবং মিনারেল ওয়াটার— তেষ্টা মেটানোর কথা বললে দু’টির কাজই এক। শরীর আর্দ্র রাখতেও এই দু’টি পানীয় একই ভাবে কাজ করে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, শরীরের খনিজের ঘাটতি পূরণে কিন্তু মিনারেল ওয়াটারের ভূমিকাই বেশি।
এই পানীয় খেলে শরীরের আর কী কী উপকার হয়?
১) হাড় এবং দাঁত ভাল থাকে। কারণ, মিনারেল ওয়াটারে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে। তা ছাড়া পেশির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেও এই খনিজগুলির প্রয়োজন পড়ে।
২) শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে মিনারেল ওয়াটার। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম তো আছেই, সঙ্গে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকায় শরীরে ফ্লুইডের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় না। স্নায়ুর কাজকর্ম পরিচালনা করতেও তা বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
৩) মিনারেল ওয়াটারে এমন কিছু খনিজ থাকে, যেগুলি হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে। পাকস্থলীর মধ্যে থাকা অতিরিক্ত অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় করতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
তবে সমস্যা আছে। কলের সাধারণ জল খেতে সে ভাবে গাঁটের কড়ি খসাতে হয় না। কিন্তু মিনারেল ওয়াটারের তো দাম অনেকটাই বেশি। সকলের পক্ষে রোজ বোতলবন্দি জল কেনাও সম্ভব নয়। তবে চাইলে মিনারেল ওয়াটার বাড়িতে তৈরিও করে নেওয়া যায়। কী ভাবে?
প্রথমে পরিষ্কার এক লিটার মতো জল ধরে এমন একটি পাত্র নিন। পাত্র যেন পরিষ্কার হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এ বার এক লিটার জলের মধ্যে এক চিমটে বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন।
জলের সঙ্গে বেকিং সোডা ভাল করে মিশে গেলে এক চিমটে এপসম সল্ট দিয়ে দিন।
ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। এর পর মিশিয়ে নিন এক চিমটে পটাশিয়াম বাইকার্বোনেট।
সমস্ত উপকরণ জলে ভাল করে মিশিয়ে নিলেই মিনারেল ওয়াটার তৈরি।