Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

শব্দে কান পাতা দায়, কে বলবে হর্ন বারণ

শুধু হাসপাতালই নয়, ওই চত্বরে রয়েছে একটি স্কুলও। এসএসকেএমের উল্টো দিকেই গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯৯৭ সাল থেকে হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসপাতাল ও স্কুলের সামনে যে ভাবে দিনভর হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চলাচল করে, তাতে উদ্বিগ্ন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী মিত্র।

দাবি: ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসা মানুষকে সতর্ক করতেই লাগাতার হর্ন দিতে হয় বলে যুক্তি চালকদের। পিজি-র সামনে। নিজস্ব চিত্র

দাবি: ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসা মানুষকে সতর্ক করতেই লাগাতার হর্ন দিতে হয় বলে যুক্তি চালকদের। পিজি-র সামনে। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে হরিশ মুখার্জি রোডের দু’দিকে কলকাতা পুলিশের তরফে কমপক্ষে ১২টি ‘নো হর্ন জোন’ বোর্ড লাগানো। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই চালকদের। মঙ্গলবার দুপুরে এসএসকেএমের সামনে ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে ঘুণাক্ষরেও মনে হল না, এটা ‘নো হর্ন জোন’।

চিত্র ১: হরিশ মুখার্জি রোড ও শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের মোড়ে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সিগন্যাল সবুজ। কিন্তু এসএসকেএমের সামনে আটকে কালীঘাটগামী একাধিক গাড়ি। সিগন্যাল সবুজ হওয়ার পরে মিনিট দু’য়েক কেটে গেলেও নড়ছে না কিছু। অগত্যা পিছন থেকে দেদার হর্ন। কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। পাশেই দাঁড়িয়ে ট্র্যাফিক কনস্টেবল। হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো সত্ত্বেও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? দৃশ্যতই বিরক্ত ওই কনস্টেবলের জবাব, ‘‘ট্র্যাফিক সামলাব না জরিমানা করব? তা ছাড়া, এ সব আমাদের কাজ নয়।’’

চিত্র ২: দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালের মূল প্রবেশপথে গেট আটকে হরিশ মুখার্জি রোডের এক পাশে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি। সামনের গাড়িকে এগোনোর জন্য পিছন থেকে একাধিক
গাড়ির চালক জোরে হর্ন বাজিয়েই চলেছেন। আইনভঙ্গকারী এক চালককে এর কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বিরক্তির সুরে বললেন, ‘‘আমার এখন তাড়া। সামনে গাড়ি এসে গেলে হর্ন তো বাজাতে হবেই।’’ কিন্তু হাসপাতালের সামনে তো হর্ন বাজানো তো বারণ? উত্তরে চালকের জবাব, ‘‘এটা তো জানি না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম!’’

চিত্র ৩: শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট ও হরিশ মুখার্জি রোডের মোড় লাগোয়া ফুটপাথের বেশিরভাগটাই ব্যবসায়ীদের দখলে। জায়গাটা এসএসকেএমের মূল ফটক থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। আবার হাসপাতালের সামনের ফুটপাথ দখল করেও রীতিমতো সংসার পাতা হয়েছে। ফলে ফুটপাথে হাঁটারই জায়গা নেই। বাধ্য হয়েই পথচারীরা নেমেছেন রাস্তায়। পিছন থেকে ছুটে আসা গাড়ির সামনে লোকজন এসে পড়ায় হর্ন বাজিয়ে চলেছেন চালক।

এ সব ছবিই বলে দিচ্ছে, নো হর্ন জোন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের সামনে শব্দদূষণের তাণ্ডব কতখানি।

শুধু হাসপাতালই নয়, ওই চত্বরে রয়েছে একটি স্কুলও। এসএসকেএমের উল্টো দিকেই গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯৯৭ সাল থেকে হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসপাতাল ও স্কুলের সামনে যে ভাবে দিনভর হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চলাচল করে, তাতে উদ্বিগ্ন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তার পাশেই দোতলায় ক্লাস নেওয়ার সময়ে হর্নের দাপটে খুব সমস্যা হয়। অবস্থা এমন হয় যে ছাত্রীরা ঠিক মতো শুনতে পায় না। হাসপাতালের উল্টো দিকেই স্কুল, এ রকম এলাকায় আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত অভিযান চালানো জরুরি।’’ এসএসকেএমের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, আইন থাকলেও তা বেশিরভাগ চালকই মানেন না। কলকাতা পুলিশ মাঝেমধ্যে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। নিয়মিত অভিযানের বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

কিন্তু তাঁদের জানানোর ওপরেই কি পুলিশের অভিযান নির্ভর করবে? কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘মোটেই তা নয়। হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো বন্ধ করতে পুলিশের তরফে নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি, অভিযান চালানো হয়। তবে চালক নিজে সচেতন না হলে লাগাতার অভিযান চালিয়েও কাজের কাজ হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Noise pollution Pollution Noise হর্ন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE