হাসপাতালে ক্যানসার আক্রান্ত বাবার সামনে মালাবদল দিওতিমার। নিজস্ব চিত্র।
চিত্রনাট্যের মতো হলেও দিওতিমা সরকারের জীবনে সেটাই ঘোরতর সত্যি। ক্যানসার আক্রান্ত তাঁর বাবা যে হাসপাতালে ভর্তি, মঙ্গলবার সেখানেই মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। আননন্দঘন সেই মুহূর্ত পেরিয়ে বারে বারেই দিওতিমার মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর জীবনের গত ১০ বছরের ওঠানামার কাহিনি। বাবার অসুস্থতা, নিজের পড়াশোনা, নোটবন্দি, প্রেম, বিয়ে— সবটা মিলিয়ে চিত্রনাট্যকে হার মানানো এক গল্প।
বাবা সন্দীপ সরকারের ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে তখন দিওতিমা মুম্বই-কলকাতা ছুটে বেড়াচ্ছেন। আর ঠিক সেই সময়েই নোটবন্দি। ব্যাঙ্কের টাকাপয়সা লেনদেন নিয়ে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তাঁর। তার উপরে বাড়ি মেরামতির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোনও নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। বাবার চিকিৎসা করাবেন, ব্যাঙ্কের ধার মেটাবেন নাকি নোটবন্দির ধাক্কা সামলাবেন? এ সবের কিছুই যখন বুঝতে পারছিলেন না, তখন ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ হয় কাশীপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক সুদীপ্ত কুণ্ডুর সঙ্গে। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
শেষ পর্যন্ত ১০ বছর ধরে এই লড়াইয়ের মাঝে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ওই ব্যাঙ্ক অফিসারের সঙ্গেই হাসপাতালে রেজিস্ট্রি বিয়ে দিওতিমার। বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান আর কয়েক দিন বাদেই।
দিওতিমাও বিশ্বাস করতে পারছেন না নিজের জীবনেরই এই কাহিনি। তবে বাবার সামনে পছন্দের পাত্রের গলায় মালা দিতে পেরে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। বলছেন, “সেই সময় আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমাদের কোনও কিছু না জানিয়েই বাবা মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। ওঁর জিভে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। পরে আমরা রিপোর্ট দেখে জানতে পেরেছিলাম। সেই লড়াই শুরু। এর পর বাবা ফিরতেই ব্যাঙ্কের লোন মেটাতে গিয়ে সুদীপ্তর সঙ্গে পরিচয় হয়। ও যে ভাবে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি কৃতজ্ঞ।”
আরও পড়ুন: ক্যানসারে মৃত্যুর মুখে বাবা, তাই হাসপাতালেই বিয়ে সারলেন মেয়ে
২০১১ সালে হঠাৎ জিভের ক্যানসার ধরা পড়ে সন্দীপ সরকারের। স্ত্রী-মেয়েকে না জানিয়েই তিনি চলে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ে, চিকিৎসা করাতে। পরে বাবার এই অবস্থার কথা জানতে পেরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সেই সময়ের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দিওতিমার। পায়ের মাংস নিয়ে জিভের অপারেশন হয়। টেলিকমিনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপবাবু ২০১৬ সাল পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন। কাজেও যোগ দিয়েছিলেন। ‘স্পিচ থেরাপি’ চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে মুখের আর একটি অংশে ক্যানসার ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন চলতে থাকে। ২০১৭ থেকে নতুন করে তাঁর ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোটের উপরে ভালই ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: সিঁথি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আগেও
এর মধ্যে প্রেসিডেন্সির সেই ছাত্রী রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের শারীরবিদ্যার রিসার্চ স্কলার হয়ে গিয়েছেন। সুদীপ্তের সঙ্গে সম্পর্কও এগিয়েছে। কেন সুদীপ্তকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিলেন দিওতিমা? তাঁর কথায়: “ঘটনাচক্রে সুদীপ্তের মা ২০১০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ওর বাবাও ক্যানসারের রোগী। ওঁর থেকে আর কে ভাল বুঝবে আমার যন্ত্রণা? তাই ওকেই বিয়ে করলাম। বাবা মালাবদল দেখে হাত নেড়েছেন। হেসেছেন। কথা বলতে পারছেন না, আইনসম্মত ভাবে বিয়ের পর, বাবা চান সামাজিক ভাবে বিয়েটা ১৬ ফেব্রুয়ারিতেই হোক। বাবা এখন আইসিইউতে। এর পর কী হবে জানি না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy