টানা দু’দশক ঘুমিয়েই ৩৬ বছর পূর্ণ করলেন সৌদির যুবরাজ অল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল। গোটা জগৎ তাঁকে চেনে ঘুমন্ত রাজপুত্র বা ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে। ১৬ বছর বয়সে একটি ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে কোমায় চলে যান অল-ওয়ালিদ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
এ যেন এক রূপকথার গল্প। গল্পও ঠিক নয়। কঠোর বাস্তব এবং বড়ই মর্মান্তিক। কল্পকাহিনিতে দুষ্টু রাক্ষস বা রাক্ষসীর কারসাজিতে বছরের পর বছর ঘুমিয়ে থাকেন রাজকুমার বা রাজকুমারীরা। যেমন বিদেশি গল্পে দুষ্টু পরির অভিশাপে ১০০ বছর ঘুমিয়েছিল রূপকথার রাজকুমারী। ঠাকুমার ঝুলিতে বর্ণিত রাজকুমারীকে রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল বছরের পর বছর।
০২১৪
তেমনই বাস্তবের এক যুবরাজও টানা ২০ বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছেন গাড়ি দুর্ঘটনার ছদ্মবেশে আসা ‘রাক্ষসের’ কারণে। টানা দু’দশক ঘুমিয়েই ৩৬ বছর পূর্ণ করলেন সৌদির যুবরাজ অল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল, বিশ্ব যাঁকে চেনে ঘুমন্ত রাজপুত্র বা ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে। ১৬ বছর বয়সে একটি ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে কোমায় চলে যান অল-ওয়ালিদ।
০৩১৪
২০০৫ সালে রিয়াধে একটি পথ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন ওয়ালিদ। ওই দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে যুবরাজ কোমায় চলে যান। সেই সময় লন্ডনের একটি সামরিক কলেজে পড়তেন তিনি। তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কে চোট লাগার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন।
০৪১৪
যুবরাজ ওয়ালিদ, সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য খালিদ বিন তালাল অল সৌদের ছেলে এবং সৌদি ধনকুবের ব্যবসায়ী অলওয়ালিদ বিন তালালের ভাইপো। প্রিন্স অল-ওয়ালিদ সৌদি রাজপরিবারের সদস্য হলেও বর্তমান বাদশার সঙ্গে সরাসরি উত্তরাধিকারী নন তিনি।
দু্র্ঘটনার পর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ভেন্টিলেটর এবং ফিডিং টিউবের উপরই নির্ভরশীল তিনি। বছরের পর বছর ধরে তাঁর অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে, সীমিত সাড়া দেওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল রাজপুত্রের মধ্যে। তাঁর মাথা এবং আঙুলগুলি সামান্য নড়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর বিশেষ কোনও আশার সঞ্চার হয়নি রাজপুত্রের সুস্থতা নিয়ে।
০৭১৪
রিয়াধের একটি হাসপাতালে ১১ বছর শুশ্রূষার পর ২০১৬ সালে ওয়ালিদকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি নিজের বাড়িতেই লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ওয়ালিদকে দেখভাল করার জন্য জনা দশেক কর্মচারী রাখা হয়েছে সৌদি রাজপরিবারের তরফে। এর জন্য খরচ হয় কোটি কোটি টাকা।
০৮১৪
১৮ এপ্রিল সৌদি রাজপরিবারের সদস্যেরা জন্মদিন উদ্যাপন করে সমাজমাধ্যমে ওয়ালিদের ছোটবেলার বেশ কিছু ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন। তাঁরা সমাজমাধ্যমে রাজপুত্রের সুস্থতা কামনা করে লিখেছিলেন, এতগুলি বছর ধরে তাঁদের হৃদয় জুড়ে রয়েছেন ওয়ালিদ।
০৯১৪
ইশ্বরের কৃপায় তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন, প্রার্থনা করেছেন পরিবারের আত্মীয়েরা। হাজার হাজার মানুষ তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
১০১৪
একই ধারণা পোষণ করে চলেছেন যুবরাজের বাবাও। তিনিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, কোমা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরবেন তাঁর আদরের সন্তান। খালিদ মনে করেন, এক দিন ঠিক ‘অলৌকিক’ কোনও ঘটনা ঘটবে এবং তাঁর ছেলে কোমা থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
১১১৪
খালিদ এক বার বলেছিলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা আমার ছেলের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ছেলের কবর দিতাম। কিন্তু আমার ছেলে যত ক্ষণ নিশ্বাস নেবে তত ক্ষণ আমি চিকিৎসা চালিয়ে যাব।’’ শুধু খালিদ নন, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সৌদি রাজপরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই ওয়ালিদের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করতে রাজি নন।
১২১৪
বিগত বছরগুলোয় যুবরাজের চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছিলেন আমেরিকা ও স্পেনের খ্যাতনামী চিকিৎসকেরা। কিন্তু সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও তাঁর জ্ঞান ফেরানো যায়নি।
১৩১৪
সমাজমাধ্যমে এক বার এমনও রটে গিয়েছিল যে, ওয়ালিদ আর জীবিত নেই। বেশ কয়েক বছর আগেই নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিবারের তরফে এই কথা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৪১৪
চিকিৎসকেরা ওয়ালিদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সব আশা ত্যাগ করেছেন। পরিবারের আশা ও লড়াই করে যাওয়ার অদম্য জেদেই ২০ বছর ধরে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে রাজপুত্রের দেহে। ওয়ালিদের বাবা ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের আশা, পৃথিবীতে এমন সোনার কাঠির সন্ধান তাঁরা পাবেন, যা ছোঁয়ালেই আবার চোখ মেলে তাকাবেন তাঁদের আদরের রাজপুত্র ওয়ালিদ।