অনিয়ম: নির্দেশের পরেও রবিবার দেখা গেল আর জি কর হাসপাতালে সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়াই কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর বর্ষবরণের রাতে দিল্লিতে এক তরুণী স্কুটার চালিয়ে ফেরার সময়ে একটি গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল তাঁকে। পড়ে যাওয়ার পরে গাড়ির চাকায় জড়িয়ে গিয়েছিল তরুণীর দেহ। সেই অবস্থাতেই তাঁকে অনেকটা টেনে নিয়ে যায় গাড়িটি। রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পরে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পরে দেশের স্মার্ট সিটিগুলিতে জনসুরক্ষা ও নিরাপত্তার অডিটের (পাবলিক সেফটি অ্যান্ড সিকিয়োরিটি অডিট) নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কয়েকটি শহরে হওয়া অডিটে ধরা পড়েছিল, সেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো থাকলেও তার অব্যবস্থার বিষয়টি।
আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতায় কি সিসি ক্যামেরার কোনও অডিট হয় বা হয়েছে? এ বিষয়ে ‘ক্যামেরা বেসড সার্ভেল্যান্স’-এ বিশেষজ্ঞ, একটি বেসরকারি সংস্থার চিফ টেকনিক্যাল অফিসার তুহিন বসু জানাচ্ছেন, ঘটনা ঘটার পরে সেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো কোনও সমাধান নয়। পরিকল্পনা আগে থেকেই করা দরকার। তুহিনের কথায়, ‘‘ভিআইপি-দের সুরক্ষার জন্য আগে থেকে তৈরি নিরাপত্তা বলয়ের মতোই সিসি ক্যামেরার ফাঁকফোঁকর চিহ্নিতকরণের জন্য পূর্ণাঙ্গ অডিট দরকার। সেই অডিটেই সিসি ক্যামেরা বসানোয় ত্রুটি, সেগুলি ঠিক ভাবে ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারছে কিনা, এমন নানা তথ্য উঠে আসবে।’’
কলকাতা পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, এই অডিট দৈনিক ভিত্তিতে করা হয়। কোথায় ক’টি সিসি ক্যামেরা অচল, কোথায় ক’টি কাজ করছে, তা দৈনিক ভিত্তিতে অ্যাপের মাধ্যমে নজরে রাখা হয়। প্রতিদিন সকালে এ বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যার মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার সার্বিক অবস্থা জানা যায়। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘অনেক কারণে সিসি ক্যামেরা খারাপ হতে পারে। হয়তো কোনওটির তার ছিঁড়ে গিয়েছে, গাছ পড়েছে কোনওটির উপরে, আবার ঝড়বৃষ্টিতে কোনও সিসি ক্যামেরার হয়তো মুখ ঘুরে গিয়েছে। এমন ক্ষেত্রে ওই অ্যাপ স্বয়ংক্রিয় ভাবে জানিয়ে দেয়, কোথায়, কোন সিসি ক্যামেরায় সমস্যা রয়েছে। সেই অনুযায়ী সেগুলি সারানোর ব্যবস্থা করা হয়।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সরকারি ভবন, বহুতলগুলিতে অগ্নি সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য সরকার গঠিত ‘ফায়ার টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি’ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির স্থপতি-সদস্য তথা বহুতল বিশেষজ্ঞ সুবীর বসুর কথায়, ‘‘আর জি করের ঘটনায় বার বার সিসি ক্যামেরার প্রসঙ্গ উঠে আসছে। আর জি করের মতোই শহরের অন্যত্র, শুধু রাস্তাঘাটে নয়, বরং সরকারি-বেসরকারি সমস্ত ভবনে সিসি ক্যামেরার সমস্যা-ত্রুটি জানার জন্যই ফায়ার অডিটের মতো সিসি ক্যামেরার অডিটেরও খুব প্রয়োজন।’’
কিন্তু আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কী করা দরকার? সুবীর বসুর সুপারিশ, ‘‘অগ্নি-সুরক্ষা বিধি না মানলে ফায়ার লাইসেন্স বাতিলের মতোই সিসি ক্যামেরার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট লাইসেন্সের ব্যবস্থা চালু হোক। নির্দিষ্ট নিয়ম না মানলে সেই লাইসেন্স বাতিল হবে।’’
তুহিন এ বিষয়ে বলছেন, ‘‘ঘটনার পরে যা-ই পদক্ষেপ করা হোক না কেন, তাতে হারানো প্রাণ ফিরে আসে না। তাই এ রকম ঘটনা যাতে আর কোনও ভাবেই না ঘটে, সেই চেষ্টাই পুলিশ-প্রশাসন-সহ সমস্ত পক্ষকে করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy