কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে গত দশ বছরে সেটা গভীর থেকে গভীরতর হয়। ওর কাছে আমার একটা আলাদা সম্মান ছিল। ওর মুখের দিকে তাকালে আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করেছি। ও তো প্রকৃত শিল্পী ছিল, তাই আর এক শিল্পীকেও সম্মান করত।
ওর সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে বলতে, টেলিফোনে কথা বলতে বলতে ডুবে যেতাম। কত কথা! সৃষ্টিশীল একটা মানুষ কথা বলে যেত।
আরও পড়ুন, মৃত্যুর গান, দুঃখের গান— সব ছাপিয়ে এখন কালিকার মুখই ভেসে উঠছে
আসলে, ছেলেটা পাগল ছিল খুব! একদিন হঠাৎ ফোন করে বলল, ‘দেবুদা, আমি আসছি।’ বললাম, আয়। আমি আছি তো। কিছু ক্ষণের মধ্যে চলে এল আমার বালিগঞ্জের স্টুডিওয়। চোখেমুখে উত্তেজনা, বলল, নদীর বয়ে চলা, তার সঙ্গে লোকসঙ্গীতের পরিভ্রমণ...একটা কাজ করব। আমি বললাম, এটা তো খুব বড় কাজ! বিশাল মাপের কাজ! আমি কী ভাবে তোকে সাহায্য করব রে? আমি তো লোকসঙ্গীতের বিশেষজ্ঞ নই! ও বলল, সে জন্যই তো তোমার কাছে এলাম! তোমার কাছে মৌলিক ভাবনা পাব।’ তার পরে অনেক কথা...ও বলে চলেছে, আমিও ওর কথা শুনতে শুনতে স্বভাবজাত উত্তেজনায় ভুগছি। কী বলে চলেছে ও! এত গভীর ভাবে ভেবেছে বিষয়টা নিয়ে! এটা তো একটা অ্যানথ্রোপলজিক্যাল কাজ!
অনেকক্ষণ পরে আমার খেয়াল হল। কালিকাকে জিগ্যেস করলাম, ‘খেয়ে এসেছিস কিছু?’ ও ওর সেই দরাজ হাসি হেসে বলল, ‘না খেয়ে আসিনি। তোমার সঙ্গে খাব।’ এত নিশ্চিন্ত আর অমোঘ সেই উচ্চারণ, ‘তোমার সঙ্গে খাব।’ খেলও আমার সঙ্গে। এত বন্ধুতা ছিল ওর গলায় যে আমি ভিতরে ভিতরে কেঁপে গেলাম...সেই বন্ধু আমার আজ চলে গেল!
‘চতুরঙ্গ’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি ‘দোহার’-এর সঙ্গে। দারুণ অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন, হাসিখুশি ছেলেটা এ ভাবে চলে গেল?
কত সময় ফ্রেন্ডস এফ এম-এ অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি। কালিকার সঙ্গে দেখা, কথা। ও বলত, ‘দেবুদা, নীচে দাঁড়াও, আসছি।’ ওর আসার কথাই নয়। তবু আসত, খানিকটা গল্প করে আমাকে গাড়িতে তুলে তবে যেত।
যে কোনও মৃত্যুই মর্মান্তিক, অপূরণীয়। কিন্তু, কালিকা এ ভাবে চলে যাবে? জীবন ওকে এ ভাবে কেড়ে নেবে? এই মৃত্যু কী করে মেনে নেব আমি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy