Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
JU Student Death

স্বপ্নদীপের মৃত্যুর আগে ফোন পেয়েছিলেন হস্টেল থেকে, কী কথা হয়েছিল? জানালেন যাদবপুরের ডিন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বুধবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে প্রথম ফোন পান ডিন অফ স্টুডেন্টস।

photo of Ju student death

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডু (বাঁ দিকে)। হস্টেলের এই জায়গাতেই পড়ে গিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৩৬
Share: Save:

এক ছাত্রের ‘পলিটিসাইজ়েশন’ হয়েছে। বুধবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে এক পড়ুয়ার কাছ থেকে ফোনে এ কথাই শুনেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়। ‘পলিটিসাইজ়েশন’ শব্দের মর্মার্থ স্পষ্ট হয়নি তখন রজতের। পড়ুয়ার কাছে শব্দের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ওই পড়ুয়া জানান যে, এক ছাত্রকে ক্যাম্পাসে বলা হয়েছে হস্টেলে না থাকতে। কারণ, সেখান থেকে নাকি দোতলা, তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিতে হয়। শুক্রবার সেই কথোপকথনের কথা প্রকাশ্যে আনলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘনিয়েছে। র‌্যাগিং না কি মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য কারণ? এই নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ডিন অফ স্টুডেন্টসের এই মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করল।

বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রের পরিবার। ছেলের মৃত্যুতে হস্টেলের আবাসিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা রমাপ্রসাদ কুণ্ডু। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে স্বপ্নদীপের বাবা নির্দিষ্ট কারও নাম করে অভিযোগ দায়ের করেননি। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০-১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। স্বপ্নদীপের বাবাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রীকেও স্বপ্নদীপের বাবা র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ক্যাম্পাসে ঠিক কী ঘটেছিল? এই নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার ডিন অফ স্টুডেন্টস বলেন, ‘‘রাত ১০টা ৫ মিনিটে (বুধবার) এক পড়ুয়া আমায় ফোন করে। সে জানায়, এক ছাত্রের সমস্যা হচ্ছে। আমি জানতে চাই কী সমস্যা? ওই পড়ুয়া তখন বলে, তার পলিটিসাইজ়েশন হয়েছে। আমি বলি সেটা কী? খুলে বলো। সে বলে, এক পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে বলা হয়েছে হস্টেলে না থাকতে। কারণ, সেখানে থাকলে দোতলা, তিন তলা থেকে ঝাঁপাতে হয়।’’ এর পরেই ওই পড়ুয়াকে বিষয়টি হস্টেলের সুপারকে জানাতে বলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। কারণ, ক্যাম্পাসে সুপার থাকেন। সেই সময় নৈশভোজ সারছিলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। তিনি বলেন, ‘‘রাত ১০টা ৮ মিনিটে খেতে খেতেই সুপারকে ফোন করি। যে পড়ুয়া ফোন করেছিল, ফোনের ‘ট্রুকলার’ মারফত তার নাম সুপারকে জানাই। তাকে চেনেন কি না জিজ্ঞাসা করি। উনি চেনেন বলায় ওঁকে বলি একটা সমস্যা হয়েছে এ-২ ব্লকে। আপনি দেখুন। আমায় রিপোর্ট দেবেন।’’ তার পর আর কোনও ফোন পাননি বলে দাবি করেছেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। রাত ১২টা নাগাদ সুপারের থেকে তিনি ফোন পান বলে দাবি করেন। ওই ফোনেই ডিন অফ স্টুডেন্টসকে সুপার জানান, এক পড়ুয়া পড়ে গিয়েছে। ওই ছাত্রকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। তিনি নিজেও রওনা দেন।

দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শুক্রবার ডিন অফ স্টুডেন্টস আরও বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল থেকে র‌্যাগিংয়ের একটি অভিযোগ পেয়েছি আমরা। সেই নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।’’ উপাচার্যের নির্দেশ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-১, এ-২ ব্লকে হস্টেলে প্রথম বর্ষের যত পড়ুয়া রয়েছেন, তাঁদের নিউ বয়েজ় হস্টেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানান ডিন অফ স্টুডেন্টস। ওই হস্টেলগুলি যে সব ছাত্রের জন্য বরাদ্দ নয়, সে রকম অনেক ‘পাস আউট’ পড়ুয়াও মেন হস্টেলে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশ করার পরও কী ভাবে হস্টেলে থাকছেন ওই পড়ুয়ারা? এই প্রসঙ্গে ডিন অফ স্টুডেন্টস বলেন, ‘‘এটা উপাচার্যকে বলবেন। রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করবেন। প্রাক্তনীদের অবিলম্বে হস্টেল ছাড়তে নোটিস জারি করা হয়েছে।’’

Photo of JU student death

যাদবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ বিজেপির। —নিজস্ব চিত্র।

র‌্যাগিং প্রসঙ্গে ডিন অফ স্টুডেন্টস বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে। খুবই মর্মান্তিক। বাবা-মায়ের তাঁর সন্তানকে হারানো সবচেয়ে বেদনাদায়ক। খুবই দুঃখের। এই জিনিস যাতে আর কখনও না ঘটে সেটা দেখবে বিশ্ববিদ্যালয়। অতীতে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় বেশ কয়েক জন পড়ুয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। হস্টেল থেকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে।’’

প্রশ্ন থেকে যায়, রাত ১০টা ৫ মিনিটে ডিন অফ স্টুডেন্টস ফোন পেলেন এবং তাঁর দাবি, সমস্যার কথা তিনি সুপারকে তখনই জানালেও কেন রাত ১২টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করলেন না?

শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান, ডিন অফ স্টুডেন্টস এবং বাংলা বিভাগের পাঁচ পড়ুয়া যাদবপুর থানায় যান। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy