যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। —ফাইল চিত্র।
ছেলের মৃত্যুতে হস্টেলের আবাসিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন যাদবপুরের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর বাবা রমাপ্রসাদ কুণ্ডু। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে স্বপ্নদীপের বাবা নির্দিষ্ট কারও নাম করে অভিযোগ দায়ের করেননি। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০-১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। স্বপ্নদীপের বাবাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রীকেও স্বপ্নদীপের বাবা র্যাগিংয়ের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘‘পুত্রকে তো ফিরিয়ে দিতে পারব না, তবে দোষীরা যাতে শাস্তি পায় এবং তদন্ত ঠিক মতো হয়, তা দেখব।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের একটি ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় বাংলা বিভাগের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপের। স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলে পরিবার। তাঁর মামা অরূপ কুণ্ডু দাবি করেন, সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। জায়গা না পেয়ে হস্টেলে এক বন্ধুর সঙ্গে অতিথি হিসাবে থাকছিলেন স্বপ্নদীপ। সেখানেই র্যাগিং করা হয়েছে তাঁর ভাগ্নেকে। বুধবার রাতে মাকে ফোন করে ‘ভাল নেই’ বলেও নাকি জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যাদবপুর থানাতেই ছিলেন স্বপ্নদীপের পরিবারের সদস্যরা।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, স্বপ্নদীপের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্রের মাথার বাঁ দিকের হাড়ে চিড় ছিল। বাঁ দিকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যায়। সেই কারণেই অভ্যন্তরীণ আঘাত গুরুতর হয়ে উঠেছিল। ভেঙে গিয়েছিল কোমরও। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর শরীরে মদ্যপানের কোনও প্রমাণ মেলেনি। সাধারণ খাবারই খেয়েছিলেন স্বপ্নদীপ।
রবিবার থেকে হস্টেলে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন নদিয়ার হাঁসখালির বগুলা এলাকার বাসিন্দা স্বপ্নদীপ। তবে কোনও ঘর তাঁর নামে নির্দিষ্ট করা ছিল না। ৬৮ নম্বর ঘরে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের অতিথি হিসাবে থাকছিলেন তিনি। ওই ঘরে ছিলেন চার ছাত্র। গত তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসেও স্বপ্নদীপ উপস্থিত ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁর বিজ্ঞান ছিল। তবে বাংলা পড়তে ভালবাসেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১১.৪৫ মিনিট নাগাদ হস্টেলের ব্যালকনি থেকে পড়ে যান স্বপ্নদীপ। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, হাসপাতাল থেকে যে কাগজে তাঁদের সই করতে বলা হয়েছে, তাতে ছাত্রের শরীরে আঘাতের উল্লেখ আছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি পদাধিকার বলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও বটে। তিনি বলেন, ‘‘আমি হস্টেল কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমি সকলের সামনে তা প্রকাশ করতে চাই না। তবে এটুকু স্পষ্ট যে, হুমকি, ভয় দেখানোর মতো কিছু ঘটেছিল, যা ছাত্রের মনে চাপ সৃষ্টি করে। তদন্তের মাধ্যমেই সত্যিটা প্রকাশ্যে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy